বাংলাদেশ
পরীক্ষামূলক প্রচার
28-Sep-2024
সেন্স অব হিউমার: মানব জীবনে জরুরি গুণ
শারমিন সুমি
সেন্স অব হিউমার:  মানব জীবনে জরুরি গুণ

আমরা যারা ট্রেইনার, টিচিং লারনিং প্রফেশনে আছি, তাদের জন্য হাস্যরস বোধ বা sense of humour থাকাটা জীবনে খুবই জরুরি।

আমরা যা শেখাতে চাই, তা আনন্দদায়ক না হলে যারা তা শিখবেন, তাদের জন্য তা যথেষ্ট দুরূহ হয়ে ওঠে।  তাই যে কোনো কিছু শেখানোর সময় সেই বিষয়টিকে আনন্দদায়ক করে তুলতে পারলে শিক্ষাটা তারা আনন্দের সাথে গ্রহণ করতে পারে।

এজন্য ট্রেনিং সেশনে আমরা বিভিন্ন সময় বিষয় ভিত্তিক জোকস বলে থাকি। জোকসগুলো হাস্যরস তৈরি করে বিষয়টাকে আনন্দদায়ক লারনিংয়ে পরিণত করে এবং শেখাটাকে আরো সহজবোধ্য করে তোলে। হাস্যরস তৈরিতে জোকস সবচেয়ে কার্যকরী ভূমিকা পালন করতে পারে।

২০১৮ সালের দিকে একটা এনজিওতে ট্রেইনার হিসেবে ১৫ দিনের একটা ট্রেনিংয়ে গিয়েছিলাম। যেখানে মোটামুটি ৪০ জনের মতো অংশগ্রহণকারী ছিলেন। ট্রেনিংয়ের সময় ছিলো লম্বা, মানে প্রায় ঘণ্টা তিনেক।

তো সেখানে আমি প্রতিদিন সেশন নেয়ার শুরুতে একটা , মাঝামাঝি পর্যায়ে আরেকটা এবং শেষদিকে এসে শেষ জোকসটি শুনিয়ে দিতাম। যাতে প্রশিক্ষণের দুরূহ কথাগুলো শুনতে শুনতে প্রশিক্ষণার্থীরা ক্লান্ত কিংবা বিরক্ত হয়ে না পড়ে। হাস্যরসে তারা ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠে।

আমি নিজেই এটা শিখেছিলাম একজন বিদেশি মোটিভেশনাল স্পিকারের কাছ থেকে। প্রথম চার দিন সেশন নেওয়ার পর পঞ্চম দিনের দিন একজন মুখ ফুটে বলেই ফেললেন, আপা আপনি প্রতিদিন জোকস বলেন, কেন বলেন তো?

প্রশ্নটি সেই মোটিভেশনাল স্পিকারের সাথে মিলে যাওয়ায় আমার শেয়ার করতে কোনো অসুবিধা হলো না।

আমি তাকে বললাম, শুরুতেই জোকস বলার কারণ ছিলো সবার সমস্ত মনোযোগ আমার দিকে টানা। এখানে সবাই স্বশরীরে উপস্থিত থাকলেও কেউ কেউ মানসিকভাবে অনুপস্থিত থাকতে পারেন। সে সময় কেউ হয়তো বাবা মার কথা ভাবছেন, কেউ তার বাচ্চার কেউবা তার ওয়াইফ কিংবা পারিবারিক কোনো সমস্যার কথা।

তো জোকস শোনার পর যারা হেসেছে, তাদের হাসির শব্দে যারা অন্যমনস্ক ছিলো বা মানসিকভাবে অনুপস্থিত ছিল তারাও ভাবছে এইদিকে মনোযোগ দেয়া দরকার এবং দেখা যায় এরপরে আমি কী বলছি সেদিকে তারাও মনোযোগ দিচ্ছে।

মোট কথা, আমি এটেনশন পাওয়ার জন্যই প্রথম দিকে জোক্সটা বলি। আর মাঝে যেই জোকসটা বলি, তার কারণ দীর্ঘ সময় ধরে কাজের কথা শুনতে শুনতে অনেকেই ক্লান্ত হয়ে পড়েন। জোকস শোনার পর তারা হাসেন এবং ফের চাঙ্গা হয়ে ওঠেন।

আর শেষ যেই জোকস্ টা বলি তা হলো তারা সবাই যেন যাওয়ার সময় আমাকে হাসতে হাসতে মনে রাখে।

না মনে রাখলেও সমস্যা নাই, তবে বন্ধু বান্ধবদের সাথে আপনার সম্পর্ক ভালো করতে হাস্যরসের তুলনা নাই।

একটু খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, আমাদের মধ্যে যে বন্ধুটি একটু মজার কথা বলে বা সবাইকে হাসাতে পারে আড্ডার শিরোমণি সেই হয়। এমন বন্ধুটি যদি একদিন আপনার আড্ডায় না আসে, তবে আড্ডা জমে উঠে না।

 আপনি যদি সুন্দর ভাবে কাউকে সহজে হাসাতে পারেন বা আপনার সেন্স অফ হিউমার ব্যবহার করতে পারেন আপনি একজন এট্রাক্টিভ পারসোনালিটির মানুষ হবেন। আপনি সহজেই অন্যের পছন্দের মানুষে পরিণত হবেন। প্রত্যেকেই আপনার সান্নিধ্য পেতে চাইবে।

এই জন্য আপনি যদি নিজেকে পারসোনালিটি সম্পন্ন একজন ব্যক্তি হিসাবে নিজেকে দেখতে চান, তাহলে আপনাকে আপনার সেন্স অফ হিউমারের ব্যবহার বাড়াতে হবে।

অনেকেই মনে করেন পারসোনালিটি সম্পন্ন ব্যক্তি মানেই গম্ভীর থাকতে হবে, কথা কম বলতে হবে, হাসি ঠাট্টা করা যাবে না, হাসি ঠাট্টা করলেই বুঝি ব্যক্তিত্ব কমে যায়- এইসব হাবিজাবি।

একেবারেই ভুল একটি ধারণা।

হাস্যরসের ভালো একটা দিক হচ্ছে কেউ আপনাকে অহংকারী বা দাম্ভিক মনে করবে না। ব্যক্তিগত ভাবে আপনি নিজেও লাভবান হবেন। হাসি আনন্দে থাকলে আপনি আপনার দুঃখ কষ্ট ভুলে থাকতে পারবেন। অন্যকে হাসাতে পারার আনন্দ দুঃখবোধকে আপনার কাছ থেকে কয়েকশ’ হাত দূরে রাখতে সাহায্য করবে।

আমরা প্রায় সবাই বাচ্চাদের সাথে বাবা মায়ের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা বলে থাকি। আপনি যদি আপনার বাচ্চার বন্ধুত্ব পেতে চান, তাহলে তোদের সাথে হাসি ঠাট্টার বিকল্প নাই। 

বাচ্চারা বাবা মায়ের মধ্যে সেন্স অফ হিউমার দেখতে ভীষণ পছন্দ করে। মনে করেন বাইরে কোনো জোকস শুনে এলেন তা বাচ্চাদের সাথে এবং ফ্যামিলির সাথে শেয়ার করলেন এতে আপনার বাচ্চারাও হাসিখুশি থাকবে এবং পরিবারের মধ্যে একটা আনন্দময় সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

এই কাজটি আপনি অফিসের সহকর্মীদের সাথেও প্রয়োগ করতে পারেন। এতে তারা আপনাকে সহজ ভাবে গ্রহণ করবে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে উঠবে।

পরিশেষে একটা কথা বলি, সেন্স অফ হিউমার বা হাস্যরসের ব্যবহার বাড়াতে আমরা যেন অন্যের দুর্বলতা নিয়ে হাসাহাসি না করি। আমাদের হাস্যরস বোধ যেন অন্যের মানসিক কষ্টের কারণ না হয়, তার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।

কোনো মানুষের দুর্বলতা নিয়ে হাসি-তামাশা করা যাবে না। এই ব্যপারে আপনারা কমেডিয়ানদের ফলো করতে পারেন। খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, তারা অধিকাংশ সময় তাদের জোকসগুলো নিজেদের উপর প্রয়োগ করেই অন্যের মুখে হাসি ফোটান।

ও আচ্ছা, আরেকটা কথা, কলিগকে হাসাবেন ঠিক আছে, হাসলেই যে বন্ধু হয়ে যাবে এমনটা মনে করবেন না। মনে রাখবেন কলিগ কখনো বন্ধু হয় না।*
শারমিন সুমি
শারমিন সুমি
জন্ম: সন্দ্বীপ, চট্টগ্রাম, রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা, চট্টগ্রাম সরকারি কলেজ থেকে। পেশায় সমাজকর্মী।

সর্বশেষ

নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা

জনপ্রিয়

মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
নীতুর লিপস্টিক
নীতুর লিপস্টিক