বাংলাদেশ
পরীক্ষামূলক প্রচার
28-Sep-2024
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
ওবায়দুল আবেদীন
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
 খন্দকার আহাদ আহমেদ  মারা গেছেন, সেটাও বছর দেড়েক হয়ে গেছে। গাইবান্ধার ঐতিহ্যবাহী রাজনৈতিক পরিবারের ছেলে আহাদ আহমেদ নিজেও জীবদ্দশায় রাজনীতি করেছেন। ছাত্রজীবনে বামপন্থি রাজনীতির সাথে জড়িত থাকলেও পেশা জীবনে তিনি বিএনপির রাজনীতিতে জড়িয়ে ছিলেন। তবে গতানুগতিক রাজনীতির বাইরে আহাদ আহমেদের ভাবনায় ছিল নিজের এলাকার মানুষের পাশে কীভাবে দাঁড়ানো যায়, পাশাপাশি দেশের মানুষের ভাবনাও তাকে তাড়িত করেছে।

২০১৭ তে আহাদ আহমেদের সাক্ষাৎকারটি নিয়েছিলেন ওবায়দুল আবেদীন 

ওবায়দুল আবেদীন: উত্তরবঙ্গের অবহেলিত জেলাগুলোর মধ্যে গাইবান্ধা অন্যতম! স্বাধীনতার পরবর্তী কোন সরকারই গাইবান্ধার উন্নয়নে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়নি, এর কারণ কী বলে আপনি মনে করেন?

আহাদ আহমেদ: আমার যেটা মনে হয় যে যেভাবে গাইবান্ধাকে সাধারণত পরিচয় করিয়ে দেয়া হয়, যে এটা একটা ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে যে গাইবান্ধা একটা মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল। মূলত গাইবান্ধাকে মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল, নদীভাঙ্গন এগুলি তো সবই সত্য এবং এটা লাস্ট হাউ মেনি ইয়ারস যে আমরা আমাদের সময়কাল দেখি ৪০-৫০ বছর আগেও নদী ভাঙত, নদী একদিকে ভাঙত একদিকে গড়তো, পলি পড়ত, ভালো আবাদ হত, ওই অঞ্চলটা শস্যভাণ্ডার ছিল এবং এখনও গাইবান্ধা ধান উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটা উদ্বৃত্ত অঞ্চল, শস্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে একটা উদ্বৃত্ত অঞ্চল তো সেইক্ষেত্রে মানে প্রথমেই গাইবান্ধাকে মঙ্গাপীড়িত বা নদীভাঙ্গন কবলিত এইভাবে যে চিহ্নিত করা হয় এটা আমি ব্যক্তিগতভাবে এটার কিছুটা বিরোধিতা করি সবসময়। কারণ এটা একধরনের এনজিও প্রোজেক্ট।

এটা এনজিও প্রোজেক্ট এই অর্থে যে মঙ্গাপীড়িত অঞ্চল হলেই তখন কিছু সাহায্য সহযোগিতা, ডোনারস সহযোগিতার ব্যাপার তাদের সামনে উত্থাপিত করা যায়, এটা হয়। গাইবান্ধা খুব ঐতিহ্যবাহী একটা রাজনৈতিক এলাকা, এটা সম্ভবত ১৯২০ কিংবা ১৯২১ সালের দিকে গাইবান্ধাতে পলাশবাড়ী যে জায়গাটা এটা স্বাধীন স্টেট হিসেবে একবার ঘোষণা দিয়েছিল, ব্রিটিশ শাসনামলে। এবং বড়শোল বলতে যেটা এখন পলাশবাড়ীতে বরিশাল নামে খুব বিখ্যাত এগুলো ছিল ইংরেজদের বিভিন্ন আস্তানা। যেমন ঘোড়াঘাট ছিল, ঘোড়াঘাটটা ছিল বৃহত্তর গাইবান্ধার একটা অংশ। গাইবান্ধা একটা ঐতিহ্যবাহী অঞ্চল, দীর্ঘদিন ধরে গাইবান্ধা রাজনৈতিকভাবে অগ্রসর একটা অঞ্চল ছিল। আবু হোসেন সরকার সাহেব ছিলেন, জহু হোসেন সাহেব ছিলেন, আমার আব্বা গাইবান্ধার একজন বিখ্যাত রাজনৈতিক ব্যক্তি ছিলেন (খন্দকার আজিজুর রহমান) এবং সত্তরের দশকে এমএনএ ছিলেন, এখনও বেঁচে আছেন মানুষের মনে। মানে এনারা সব লিজেন্ডারি মানুষ এবং দে আর ভেরি ব্রেভহার্টেড পিপল। গাইবান্ধার এসব ঐতিহ্যের জায়গায় এখন সমস্যা যেটা হচ্ছে যে এখানে ঐতিহ্যটা কমে এখন অন্য জিনিসগুলো, খারাপ জিনিসগুলো সামনে চলে আসছে।

যেহেতু এটা কোনও কর্মসংস্থানের এরিয়া না, নতুন কোনও ইন্ডাস্ট্রি ওখানে যায় নাই কিন্তু একটা ব্যাপক সম্ভাবনা, গাইবান্ধা বলা চলে যে ময়মনসিংহের পর দ্বিতীয় পাট উৎপাদনের এলাকা, তো আমাদের এখানে জুট মিল নাই কেন, এই পলিসিগুলো নির্ধারণ করে রাজনৈতিক নেতারা, তারা সেটা করে না, না করে যেটা করে যে ভিন্নভাবে এটাকে উপস্থাপন করে।

এটা ঠিক আমাদের পরবর্তী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের, আগের নেতৃবৃন্দের তাদের ভুলত্রুটি যাই থাকুক না কেন তাদের একধরনের চেষ্টা ছিল যে, এক ধরনের চেষ্টা চরিত্র তারা করত আর কি, সেই চেষ্টাটা এখন করে না। এখন সবাই ওই কিছু ব্রিজ কালভার্টের রাজনীতির মধ্যে ঢুকে গেছে, একটা ব্রিজ কালভার্ট করা, নদীভাঙ্গন দেখানো, মঙ্গাকে দেখানো, এনজিওরা খুব বড় ধরনের এক্টিভিটিজের মধ্যে আছে গাইবান্ধায়, অনেক ন্যাশনাল পর্যায়ের বড় এনজিও আছে গাইবান্ধায়, তারা অনেকটা ব্যবসায়িক এনজিওতে পরিণত হয়ে গেছে অনেকেই যদিও ইভেন দোও তারপরেও আমি বলছি যে একটা সম্ভাবনা গাইবান্ধার এখনও পর্যন্ত আছে। রাজনৈতিকভাবে যদি এটাকে এড্রেস করা যায় এবং ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নেয়া যায় এটা অনেক ভালো একটা জায়গা হতে পারে।

গাইবান্ধায় তো সবসময় সরকারবিরোধী সংসদ সদস্য নির্বাচিত হত, যে সরকার থাকতো তার বিপরীত দলের সদস্যরা মেম্বার অফ পার্লামেন্ট ছিল। যে কারণে সরকারের নেকদৃষ্টি কখনই ছিল না। আবার দীর্ঘসময় ধরে যারা ক্ষমতায় ছিল যেমন জাতীয় পার্টি যখন ক্ষমতায় ছিল অনির্বাচিত স্বৈরতান্ত্রিক সরকার হলেও পার্লামেন্টে তারা তো তিন-চার দফা ছিল, কিন্তু তারা ব্যক্তিগত লাভালাভ ছাড়া কিছুই দেখেনি, এলাকার উন্নয়ন তাদের মাথাব্যাথা ছিল না, এটা বেসিক্যালি এড্রেস করতে হবে যে আমার সম্ভাবনাটা কোথায়, গাইবান্ধার সম্ভাবনাটা কোথায় আছে, সে সম্ভাবনাটাই তারা জানে না। তারা জানে গাইবান্ধা মানে এতগুলি গরীব মানুষ, এতগুলি ফকির, এইসব। এটা তারা সমস্যাটা বুঝতে না পারার কারণে সমাধানটা করতে পারে নাই। তারা নিজেরা স্বার্থান্বেষী, কায়েমি স্বার্থের লোক ছিল, ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হওয়ার চেষ্টা করেছে, এখন যারা আছে তারা তো সরকারের লোক, তাদের সরকার একদিকে, তাদের এমপি একদিকে, একবার নির্বাচিত, একবার অনির্বাচিত এমপি আছে, কিন্তু কথাটা হচ্ছে এসব ব্যাপার নিয়ে তাদের কোনও মাথাব্যথা নেই।

ওবায়দুল আবেদীন: মঙ্গাকবলিত এলাকা হিসেবে উত্তরবঙ্গের অনেক জেলার মধ্যে গাইবান্ধাও ছিল। এখন মঙ্গার প্রভাব আগের মত না থাকলেও কাজের সন্ধানে গাইবান্ধার মানুষকে ঢাকা, চট্টগ্রামে ছুটে যেতে হয়। জেলায় শিল্প-কারখানা স্থাপন না করলে এই সমস্যার স্থায়ী সমাধান সম্ভব নয়। এলাকাবাসীর কর্মসংস্থানের জন্য কোন কারখানা স্থাপনের ইচ্ছা আছে কী?

আহাদ আহমেদ: আমার নিজের একটা ইচ্ছা তো অবশ্যই আছে, আমি অদূর ভবিষ্যতে ওখানে একটা জন-ঘনত্বপূর্ণ শিল্পের দিকে যাওয়ার একটা ইচ্ছা আছে। সেটা নিয়ে আমি চিন্তা ভাবনা করছি। আমার একটা ইচ্ছা আছে যে ওখানে সামাজিকভাবে আগে যেমন বিড়ির ইন্ডাস্ট্রি ছিল, বিড়ির ইন্ডাস্ট্রিতে যেটা হত যে, কাগজ ও তামাক দিয়ে দেয়া হত, ওরা বাসা থেকে ভরে নিয়ে আসত, হ্যান্ড মেড যেটা ছিল আরকি, ওখান থেকে আমি বলছি না যে আমি তামাক ব্যবসায় যেতে চাই, আমি ইন্টারেস্টেড না অ্যাট অল, কিন্তু আমি যেটা চাই আমি ওই এলাকাতে জুট এবং চামড়াভিত্তিক কিছু সামাজিক ব্যবসার দিকে একটা টার্গেট করতে চাই যেখানে অনেকগুলো লোকের ইনভলভমেন্ট, আমি যদি চামড়ার কাটিং দিয়ে দেই, কিছু মেশিন দিয়ে দেই কিছু জায়গায়, তাহলে এনজিওরাও ওখানে একটিভ আছে যেহেতু তাদের মাধ্যমে কিছু লোকজনকে ট্রেনিং দিয়ে তাদেরকে শু এর আপারটা তারা তৈরি করে দেবে, তারপরে ফাইনালি একটা ইন্ডাস্ট্রিতে গিয়ে এসেম্বেল আমরা করতে পারি, এটা সম্ভব। এখন ব্যাপার হচ্ছে যে ওখানে যাবে কেন? গাইবান্ধাতে শিল্প যাবে কেন?

'এমব্যাঙ্কমেন্ট করে নিয়ে ভালোভাবে নদীর ভাঙ্গনের জায়গাটুকু রক্ষা করে, ওখানে কিন্তু ভালো  কটেজ অ্যান্ড আদারস করা যেতে পারে, সারা বাংলাদেশের মানুষ টু বি ইন্টেরেস্টেড টু গো দেয়ার'

গাইবান্ধা একটা পকেট সিটি, এটা যাদের বাপ-দাদার অঞ্চল তারা ছাড়া অন্য কোন অঞ্চলের মানুষ যাওয়ার কোনও কারণ নাই। তো দুইটা টার্গেট করা যেতে পারে, গাইবান্ধাকে পর্যটনের একটা এলাকা ঘোষণা করা যেতে পারে। কারণ পর্যটন  এলাকা যদি ঘোষণা করা যায়, পর্যটনের জন্য যে সকল শর্ত আছে, সে সমস্ত শর্তই গাইবান্ধায় বিদ্যমান যেমন ধরা যাক গাইবান্ধা শহরের নিকটবর্তী বালাসিঘাট আছে, তারপরে গাইবান্ধা শহরের মধ্য দিয়েই একটা নদী আছে, যদিও সে নদীটাকে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে, নদী দখল করা হয়েছে, নদী দূষণ করা হয়েছে, যারা ভূমি দস্যু আছে, এখানকার ক্ষমতার সাথে যারা জড়িত ব্যক্তি আছে তারা সেটা দখল করে নিয়েছে তো এটা একটা পর্যটন শহর করা যেতে পারে এবং নদী তীরবর্তি এলাকা ধরে এমব্যাঙ্কমেন্ট করে নিয়ে ভালোভাবে নদীর ভাঙ্গনের জায়গাটুকু রক্ষা করে ওখানে কিন্তু ভালো কটেজ অ্যান্ড আদারস করা যেতে পারে, সারা বাংলাদেশের মানুষ টু বি ইন্টেরেস্টেড টু গো দেয়ার, তারা সেখানে যাওয়ার জন্য উৎসাহী হবে, এইটার জন্য ভালো যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা দরকার, গাইবান্ধার সাথে ওয়েল কানেকটেড একটা যোগাযোগ ব্যবস্থা থাকা দরকার। আমার একটা ধারণা ইন্ডাস্ট্রির অত্যাচারে আমাদের তখন সীমিত করতে হবে, ইন্ডাস্ট্রি লিমিট করতে হবে।


ওবায়দুল আবেদীন: একজন রাজনৈতিক নেতা হিসেবে আপনি জানেন যোগাযোগ ব্যবস্থা অর্থনৈতিক উন্নয়নের পূর্বশর্ত। ঢাকার সাথে দ্রুত যোগাযোগ করতে এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি বালাসিঘাট থেকে বাহাদুরাঘাট পর্যন্ত সেতু ও রেল যোগাযোগ ব্যবস্থা স্থাপন করা। এ বিষয়ে আপনার মতামত কী?

আহাদ আহমেদ: উত্তরবঙ্গের ৯টি জেলাকে নিয়ে একটা পরিকল্পনা আছে যে ওই বালাসির উপর দিয়ে, ব্রহ্মপুত্র সেতু যেটা বালাসির উপর দিয়ে, ওইটা যদি কানেক্ট করা যায় তাহলে আমরা, যেভাবে নর্থ বেঙ্গলের ৪০০-৫০০ কিলো দূর থেকে এসে তারপরে আবার আরো ৩০০ কিলোমিটার, ঢাকা হয়ে চিটাগঙ্গের দিকে যাই, সেই দূরত্বটা কমে আসবে। জাতীয় ক্ষেত্রেও কিন্তু আমরা যেহেতু ফসিল ফুয়েলটা ইম্পোর্ট করি, সেটার উপরও চাপ কমে আসবে যদি সড়ক যোগাযোগ পথটা কমে আসে। এবং সেটা নেয়ারলি সাড়ে তিনশ থেকে চারশ কিলো কমে আসবে শুধু রংপুরের জন্য, ঠাকুরগাঁওয়ের, নীলফামারীর, লালমনিরহাটের জন্য আরো কমবে। গাইবান্ধার জন্য তো অনেক কমবে, জাস্ট ব্রিজ পার হওয়ার পরেই আমরা জামালপুরকে কানেক্ট করতে পারব এবং দুই সাইডে যে নদীর পাশে যে নতুন চরাঞ্চল বা নদীর পাশে যে এলাকা সেটাকে আধুনিক পরিবেশসম্মত করে যদি ডেভেলপ করা যায় তাহলে বিশাল শিল্প যেটা সেসব শিল্প চিটাগং থেকে টু ওয়ার্ডস এদিকে, নরসিংদী থেকে টু ওয়ার্ডস এদিকে আসতে পারে। এবং সেটা আসলে যেটা হবে ব্যাপক লোকজনের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে।

বিএনপির ভিশন ২০৩০ কর্মসূচি যেটা আছে সেখানে ২৩০ নাম্বার পয়েন্টে অলরেডি ডিক্লেয়ার করা হয়েছে। এই সেতুর ব্যাপারে বিএনপির যে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে এটা আমি দাবি করি আর কি বালাসি মুভমেন্ট ছিলই, বিএনপির এই কর্মসূচির মধ্যে সংযুক্ত করার ব্যাপারে বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে অন্যান্য যারা পলিসি মেকিংয়ের সঙ্গে ছিল এই দাবিটি আমি যুক্ত করে দিয়েছি! ব্রহ্মপুত্র সেতুটি করলে আমাদের ন্যাশনাল জিডিপিতে ০.৭৫ % এর মত গ্রোথ বেড়ে যাবে। এই জিনিসটা ওখানে উপস্থাপন করা এবং সেখানে সংযুক্ত করা এবং ভিশন ২০৩০ এর ২৩০ নম্বর পয়েন্টে বহ্মপুত্র সেতুর কথা অঙ্গীকারের মধ্যে ঢুকে গেছে অলরেডি।

ওবায়দুল আবেদীন: আমরা জানি নদী ভাঙ্গনে প্রতি বছর বিপুল অর্থনৈতিক ক্ষতির সম্মুখীন হয় গাইবান্ধার বিশাল এক অংশ। সাঘাটা, ফুলছড়ি ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, যমুনা নদীর পশ্চিম তীরের মানুষেরা নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়ে প্রতি বছরই অবর্ণনীয় কষ্টের সম্মুখীন হন। নদী ভাঙ্গন রোধে কার্যকর পদক্ষেপগুলো কী হতে পারে বলে আপনি মনে করেন? 

আহাদ আহমেদ: নদী ভাঙ্গনটা তো বাস্তবতা। আমি বললেই ভাঙ্গন থাকবে, আর না বললে থাকবে না বিষয়টা এ রকম না। নদী ভাঙ্গনের কিছু কারণ আছে। আমরা যেহেতু আপার রাইপ এরিয়ান, নর্থরা উপরের দিকের এবং ভারতের থেকে পানির প্রবাহটা আসে এদিকে, আবার যখন দরকার তখন আমরা পানি পাই না, বেশির ভাগ নদী খুব শীর্ণ অবস্থায় আছে, পানি না থাকার কারণে যারা কৃষির সঙ্গে জড়িত মৎস্যজীবী যারা আছে, তারপরে নদীর সাথে অনেক মানুষের কর্মসংস্থান জড়িত, পরিবেশের উপর অনেক প্রভাব আছে, নদীর এই ভাঙ্গনটা, ভাঙ্গন হিসেবে বড় করে দেখার কিছু নাই। এটা আমার মনে হয় যে, নদীর তো বিভিন্ন যায়গায় বাঁধ, তিস্তা ব্যারেজ, গজলডোবা এসব জায়গায় যে তারা বিভিন্ন বাঁধ তৈরি করে দিয়েছে বা এমব্যাংকমেন্ট গুলো তৈরি করে দিয়েছে তাতে কিন্তু নদীকে শাসন করতে গেলে, নদীর নিজস্ব একটা গতি আছে, সেই গতিকে যদি আমরা বাধাগ্রস্ত করতে চাই তাহলে তার উপর আমাদের খুব দক্ষতা থাকা দরকার। এবং সেইক্ষেত্রে ওয়ার্ল্ডের হাইড্রোলজিতে যারা খুব বিখ্যাত মানুষ আছেন, বিখ্যাত রাষ্ট্র আছে, সেই রাষ্ট্রগুলোকে এখানে ইনভলব করা দরকার। আমার ধারণা যে এখানে আমরা যদি নেদারল্যান্ড এর এক্সপার্টদেরকে নিয়ে আসি, এনে আমরা ঐ অঞ্চলের নদীগুলোকে যদি ঠিকঠাক করে নিতে পারি সেটা আমার মনে হয় যে খুব ভালো হবে।

ওবায়দুল আবেদীন: গাইবান্ধা পৌর এলাকায় যানজট নিত্যদিনের বিষয়। বাইপাস সড়ক নির্মাণ করা সময়ের দাবি। যানজট নিরসনে কী পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে আপনি মনে করেন?

আহাদ আহমেদ: গাইবান্ধা যেভাবে পুরোনো একটা শহর, প্রায় প্রতিটি পুরোনো জেলা শহরের চিত্রগুলো একই রকম। সেক্ষেত্রে বাইপাস সড়ক কয়েকটা করা যেতে পারে। আমাদের যে এখন গাইবান্ধা জেলখানাটা আছে তুলসিঘাটের পরে এসে জেলখানার আগে ডানদিক দিয়ে গাইবান্ধা শহরে ঢোকার আগে সড়ক বের করে নিয়ে ত্রিমোহনির বড় রোডে গিয়ে তুলে দিতে পারি, এটা একটা বাইপাস হতে পারে। এটা করলে সুবিধা হবে, যে গাড়িগুলি সাঘাটা-ফুলছড়ির দিকে চলে যাবে, ঢাকা থেকে এসে কিংবা যে গাড়িগুলো গাইবান্ধা শহরের ভিতরে ঢোকার দরকার নেই যারা ত্রিমোহনি চলে যাবে কিংবা যারা ত্রিমোহনি না ঢুকে কৃষি ইন্সটিটিউট আসতে চায় তারা বাম দিকে ঢুকবে আর ওরা ডানদিকে ঢুকবে। এই বাইপাসহ হওয়ার পরিকল্পনা চলছে, আমি শুনেছি কিছু প্রকল্প প্রণয়ণ হয়েছে, কিছু জমি যারা এখানকার ক্ষমতার সাথে জড়িত আছে তারা জমি কিনে নিয়ে সরকারের কাছে উচ্চমূল্যে বিক্রি করার চেষ্টা করছে, সবকিছুকেই তারা বাণিজ্যিকভাবে দেখে। মূল উদ্দেশ্যের প্রতি তাদের আগ্রহ নাই। 

আর একটা রোড হতে পারে। আমরা আরো সামনে এগিয়ে এসে খানকা শরীফ থেকে একটা রোড টেনে এনে একটা কালভার্ট করে, যে নদীটা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে তার উপর দিয়ে কালভার্ট করে নিয়ে এসে ঘাঘট সেকেন্ড ব্রিজের পরে বা আগে তুলে দিতে পারি তাহলে এই কানেকশনটাও হয়ে যাবে যারা সুন্দরগঞ্জ থেকে আসে তাদের গাইবান্ধা ঢোকার তো দরকার নেই, যারা লক্ষ্মীপুর, কূপতলা থেকে ঢাকা চলে যাবে বা যাদের শহরে ঢোকার দরকার নাই, তাহলে এই চাপগুলি কমে যাবে।

আরেকটা ব্যাপার হচ্ছে পৌরসভা এখন খুব একটা অন্যায় কাজ করছে। পৌরসভা ব্যাটারিচালিত গাড়িগুলি দিয়ে একধরনের নৈরাজ্য তৈরি করে রেখেছে। রিক্সা এবং ব্যাটারিচালিত গাড়ি যেখানে তাদের প্রচুর টাকা ইনকাম হচ্ছে, আট-নয় লাখ টাকায় ডেকে নিয়ে তারপরে তাদের কাছে ইজারা দিয়ে দিচ্ছে। প্রায় আট হাজার গাড়ি গাইবান্ধা শহরে প্রতিদিন ঢোকে, বের হয়। এটা একটা অপরিকল্পিত ব্যাপার। আর মেইনলি শহরের ভিতরের মেইন রোডটি বড় করে ফেলা দরকার। এই রাস্তাগুলি জেলা বোর্ডের রাস্তা ছিল। কিছু জায়গা বের করে নিয়ে মার্কেটগুলি সরানো দরকার। যেমন রড-সিমেন্টের জন্য বড় একটা এলাকা নিয়ে আমরা ডিক্লারেশন দিতে পারি যে রড-সিমেন্টের সব দোকান এক জায়াগায় থাকবে, এই পরিকল্পনা কিন্তু লোকাল গভর্নমেন্টকে করতে হবে। শহরে ঢোকার এবং বের হওয়ার রাস্তা প্রশস্ত করতে হবে। আর শহরের মধ্যে মজুদদারি যে প্রতিষ্ঠানগুলো আছে যেমন চাল-ডাল-লবণ-তেল তারা যে রাস্তাঘাট বন্ধ করে পরিবেশের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে এটার ব্যাপারে একটা শক্ত অবস্থান নেয়া দরকার।

শহরকে আমরা রিক্সা-মুক্ত করে দিতে পারি। বাইরের যেমন ইউরোপিয়ান অনেক শহরের মত, কোনদিন আমাদের ওইসময় আসবে না সে টা না, গাইবান্ধা শহরের মধ্যে আমরা খুব ভালো স্ট্যান্ডার্ড একটা পরিবহণ ব্যবস্থা করে দিতে পারি। খুব বড় শহর তো না। বয়স্ক লোকদের জন্য কিছু নির্দিষ্ট বাহনের ব্যবস্থা করে দিতে পারি যেমন ডিওএইচএস এর মধ্যে কিছু রিক্সা চলে নাম্বারসহ। শহরও এক্সপ্যান্ড করা লাগতে পারে, এ রকম একটা পরিকল্পনা আমার আছে আর কি।

ওবায়দুল আবেদীন: গাইবান্ধার শিক্ষার বিস্তারে আপনার ভাবনা কী? এলাকাবাসীর দীর্ঘদিনের  প্রত্যাশা গাইবান্ধা কৃষি ইনিস্টিটিউটকে বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তর করা।

আহাদ আহমেদ: আমার একটা লিখিত কর্মসূচি আছে, গাইবান্ধার জন্য কী কী করণীয় তাতে, যেমন সিলেটের কোন একটা অঞ্চলে একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে, সেই হিসেবে গাইবান্ধার এনডিটি আছে যেটাকে আমরা ভিএইড বলি আর কি সেখানে যে কৃষি ইন্সটিটিউট আছে তার যা অবস্থান আছে বা জমি আছে সেখানে একটা পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার দাবি রাখে এবং এটা সময়ের দাবি। এটা হওয়া উচিত এবং আমার ধারণা যে গাইবান্ধায় আমরা, বিএনপি যদি রাজনৈতিকভাবে ক্ষমতায় চলে আসে নির্বাচনের মধ্য দিয়ে, এ ব্যাপারে আমার ধারণা যে ম্যাডামের প্রতি আস্থা আছে, উনি এটা করবেন। 

আমি আবার পাশাপাশি অন্য একটা জিনিস করতে চাই, এখানে মানুষের কর্মসংস্থান করতে হবে। এখানে যদি একটা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় চালু হয়, এটা যদি আমরা দশ হাজার ছেলে-মেয়ে দিয়ে শুরু করি, আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক ক্যাপাসিটি অনুযায়ী সেটা দশ হাজার হোক বা পনের হাজার হোক; আর গাইবান্ধা সরকারি কলেজ, আদর্শ কলেজ তাদের কিছু অফ ক্যাম্পাস করে দেয়া, তাদের হোস্টেলগুলি ভালোভাবে করে দেয়া- তাদের থাকার ব্যবস্থা নাই। গাইবান্ধায় ইন্ডিপেন্ডেন্টলি বিশ্ববিদ্যালয়ও হওয়ার দরকার নাই কিন্তু ইন্সটিটিউটটাকে আমরা এগ্রিকালচার ইউনিভারসিটি করতে পারি। 

'তাহলে এখানে আশেপাশের গ্রামের যে কৃষকরা আছে তারা লাভবান হবে- দ্যাট মানি শুড গো টু দা ফারমারস পকেট। তখন সেই পয়সা দিয়েই না কৃষক তার ছেলেমেয়েকে অন্য জায়গায় পাঠাতে পারবে, উচ্চশিক্ষিত করতে পারবে'

গাইবান্ধা কলেজের ইন্টারমিডিয়েট এবং অনার্স সাবজেক্টগুলিকে স্ট্যান্ডার্ড করে নিয়ে একটা ভালো বড় কলেজ হতে পারে যেখানে গাইবান্ধা শহরের বাইরের যেসব থানা আছে, ইউনিয়ন আছে তারা এসে পড়তে পারে। তাহলে এদিকে ১৫ আর কলেজের ২০ হাজার মিলে ৪০-৫০ হাজারের মত ছেলে-মেয়ে গাইবান্ধা শহরে থাকবে। এই ৪০-৫০ হাজার ছেলে-মেয়ে যদি প্রতিদিন একটা করে ডিম খায় তাহলে ৫০ হাজার ডিম দরকার, যদি প্রতি সপ্তাহে একেকজন ১০০-২০০ গ্রাম মিট কনজাম্পশন করে, তাহলে এখানে আশেপাশের গ্রামের যে কৃষকরা আছে তারা লাভবান হবে- দ্যাট মানি শুড গো টু দা ফারমারস পকেট। তখন সেই পয়সা দিয়েই না কৃষক তার ছেলেমেয়েকে অন্য জায়গায় পাঠাতে পারবে, উচ্চশিক্ষিত করতে পারবে। এটা একটা স্বপ্নের ব্যাপার। আমার কাছে মনে হয় জিনিসগুলো খুব সহজ। এগুলো কেউ ওভাবে ভিজুয়ালাইজ করে না। আমার মনে হয় এভাবে করা গেলে গাইবান্ধাতে লোকজনের আয়-ইনকাম বাড়বে।
 
ওবায়দুল আবেদীন: আমাকে সময় দেয়ার জন্য আবারো ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

আহাদ আহমেদ: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ।


ওবায়দুল আবেদীন
ওবায়দুল আবেদীন
ওবায়দুল আবেদীন। জন্ম গাইবান্ধায়। পরিসংখ্যানে স্নাতক। সাংবাদিকতার সাথে জড়িত, সেইসাথে পলিটিক্যাল একটিভিস্ট হিসাবে বিভিন্ন প্রগতিশীল আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে।

সর্বশেষ

নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা

জনপ্রিয়

মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
নীতুর লিপস্টিক
নীতুর লিপস্টিক