বাংলাদেশ
পরীক্ষামূলক প্রচার
29-Jun-2024
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
নেহাল মুহাম্মাদ
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই

 রামপাল  বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে বামপন্থিরা শুরু থেকেই সরব ছিলেন। শেখ হাসিনার সরকার কোনো কিছুর তোয়াক্কা না করেই এই কেন্দ্রটি করেছে। এ ব্যাপারে দীর্ঘ দিন আগে জাতীয় কমিটির অন্যতম নেতা, গার্মেন্টস শ্রমিক ঐক্য ফোরামের সভাপতি এবং গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু ২০১৮ তে একটি সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। 

মোশরেফা মিশুর সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন নেহাল মুহাম্মাদ

নেহাল মুহাম্মাদ: প্রাণ প্রকৃতি বিনাশী রামপাল প্রকল্প সম্পর্কে আপনার অবস্থান কী?

মোশরেফা মিশু: আমরা মনে করি যে, রামপাল প্রকল্প যদি বাস্তবায়িত হয়, তাহলে আমাদের সুন্দরবন ধ্বংস হয়ে যাবে। ওখানকার প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-নদী সবকিছু ধ্বংস হবে। দীর্ঘ অনেক বছর ধরেই আমাদের গবেষকরা বারবার করে বলে যাচ্ছেন, কী কী ক্ষতি হবে। কয়লা ভর্তি করে যে পশুর নদী দিয়ে নিয়ে আসবে, সেই কারণে যা ক্ষতি হবে, আমরা বারবার করে এসব তুলে ধরেছি। আমি মনে করি যে, রামপাল প্রকল্প কার্যকরী হলে এদেশে ভয়াবহ রকমের পরিবেশ ও মানবিক বিপর্যয় আসবে। আমরা কোনভাবেই এটাকে সমর্থন করতে পারি না। আমরা মনে করি, সরকারের এই প্রকল্প থেকে দেশের ও জনগণের স্বার্থেই সরে আসা উচিত।

নেহাল মুহাম্মাদ: আপনি কি মনে করেন, জাতীয় কমিটি আন্দোলন করে প্রকল্প বন্ধ করতে পারবে, যেখানে সরকার প্রকল্প বাস্তবায়নে বদ্ধ পরিকর?

মোশরেফা মিশু: সরকার তো অনেক বিষয়েই বদ্ধ পরিকর। আমরা দেখি যে সরকার দেশের কিংবা জনগণের স্বার্থ বিরোধী অনেক কাজেই বদ্ধ পরিকর হয়ে আছেন। আর জনগণ যে দেশকে রক্ষা করার জন্যে, দেশের প্রাণ-প্রকৃতি-পরিবেশ-নদী এগুলো রক্ষা করার জন্যে যে বদ্ধ পরিকর সরকার সেদিকে নজর-ই দিচ্ছে না। অবস্থা দেখে আমাদের সরকারের জনগণের প্রতি কোন দায়বোধ আছে বলে মনে হচ্ছে না। জনগণের ও দেশের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে সমস্ত বিষয় আছে সরকার তার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। এরকম একটা প্রেক্ষিতে আমরা মনে করি যে, আমরা জাতীয় কমিটির ব্যানারে বেশ অনেকদিন যাবত যে আন্দোলন করছি, তা গুরুত্বপূর্ণ। এই আন্দোলনের মাধ্যমে তরুণদের মাঝে ব্যাপক একটা সাড়া জেগেছে। তরুণদের মধ্যে কেউ নাটক লিখছে, কেউ গান কিংবা কবিতা লিখছে। নানামাত্রিক ভাবে এই রামপাল প্রকল্পের বিরোধিতা করা হচ্ছে। যার জন্যে আমি মনে করি যে, জাতীয় কমিটির আন্দোলন অনেক দূর পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। আমরা আশাবাদী যে, জাতীয় কমিটির আন্দোলনের মাধ্যমে রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্প বন্ধ করা ও আমাদের সুন্দরবন রক্ষা করার দাবিতে সফল হতে পারব।

নেহাল মুহাম্মাদ: সরকারের অবস্থান অনড় সত্ত্বেও?

মোশরেফা মিশু: হ্যাঁ। কারণ, জনগণ ব্যাপকভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নেবে। বিভিন্ন সময়ে এটা নিয়ে দেখিয়েছেও। আপনি দেখবেন যে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের যে জরীপগুলো হয়েছে, তাতে দেখা গেছে কোথাও ৯৯% কোথাও ৯৫% শিক্ষার্থী এই রামপাল প্রকল্পের বিরুদ্ধে তাদের মত দিয়েছে। মানুষের এই সাড়াই আমাদের আশাবাদী করে তুলছে, সরকারের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা থাকা সত্ত্বেও।

নেহাল মুহাম্মাদ: এই প্রকল্পের মাধ্যমে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস হবে। ধ্বংস হবে বিশ্বের সবচাইতে বড় ম্যানগ্রোভ বন। সরকারকে এমন আত্মঘাতী উন্নয়ন পদক্ষেপ থেকে কীভাবে সরিয়ে আনা যায় বলে মনে করেন?

মোশরেফা মিশু: আমাদের ইতিহাসের শিক্ষা ও রাজনৈতিক কর্মী হিসেবে অভিজ্ঞতা পর্যালোচনা করে আমরা দেখেছি এই ধরনের সিদ্ধান্ত থেকে সরকারকে সরিয়ে আনার একটাই পথ, তা হচ্ছে দুর্বার গণ আন্দোলন। এখন যে আন্দোলন গড়ে উঠছে, তা যদি আরও বেশি জোরদার হয়, আমরা যদি আরও দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলতে পারি, তাহলেই কেবল সরকারকে এই তৎপরতা থেকে সরিয়ে আনা যাবে বলে মনে করছি।এছাড়া আর কোনও উপায় আমরা দেখছি না । কারণ ইউনেস্কো কিন্তু বারবার বিভিন্নভাবে এটার বিরুদ্ধে বলেছে। কী কী সমস্যা করবে তাও বলেছে। সেখান থেকে কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র সরিয়ে অন্য জায়গায় করার কথাও কিন্তু বলা হয়েছে। তারপরেও এত অনুনয় বিনয়, বাইরের এত প্রতিক্রিয়া, পৃথিবীর অন্যান্য জায়গায় যেসব বাংলাদেশী আছেন তারা এবং অনেক বিদেশি যারা সুন্দরবনের কথা জানেন, তাদের প্রতিবাদ সত্ত্বেও কিন্তু সরকার সুন্দরবনের এই প্রকল্প থেকে সরে যায় নি। বরং প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং খুবই শক্ত অবস্থান নিয়ে অনেক শক্ত শক্ত কথা বলছেন। অনেক স্ববিরোধী কথাও বলছেন। এই তাবৎ বিষয় দেখলে আমাদের মনে হয় যে, বাংলাদেশের গণআন্দোলন ও গণঅভ্যুত্থান-ই কেবল এই প্রকল্পে বাস্তবায়নে বাধা হতে পারে। এবং সরকারকে এই অবস্থান থেকে সরাতে পারে।

নেহাল মুহাম্মাদ: দেশের সাধারণ মানুষ এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বিপক্ষে, তাহলে দল-মত নির্বিশেষে সকলের অংশগ্রহণের উদ্যোগ জাতীয় কমিটি কেন নিচ্ছে না? আপনারা কি মনে করেন, জাতীয় কমিটির ‘একলা চলো নীতি’ এর বড় কারণ?

মোশরেফা মিশু: জাতীয় কমিটি একলা চলো নীতি দেয় নি । তারা সবাইকে নিয়েই কাজ করতে চায়। ৯৮ সাল থেকেই জাতীয় কমিটি কাজ করে যাচ্ছে, কিন্তু শুরু থেকে যারা ছিলেন, তারা কিন্তু এখন পর্যন্ত অনেকেই থাকতে পারেন নাই। কারণ এখানে আসা মাত্রই আপনাকে অনিবার্যভাবে আমেরিকা-ইউরোপ বা সাম্রাজ্যবাদী তৎপরতার বিরোধিতা করতে হবে। অনেকেই কিন্তু এই বিরোধিতায় বিব্রতবোধ করেন, অথচ আমরা বিরোধিতা করেই যাব। আবার অনেকে সরকারের সাথে থাকছেন। কিন্তু আমরা সরকারের বিরুদ্ধতা করছি। এটা অনেকে ধারণ করতে অস্বস্তিবোধ করেন বলেই কিন্তু সরে গেছেন।

নেহাল মুহাম্মাদ: অর্থাৎ জাতীয় কমিটির নীতি মানতে না পারাতেই তারা একলা চলছে?

মোশরেফা মিশু: হ্যাঁ । কিন্তু জাতীয় কমিটির নীতি এমন কোন শক্ত নীতি না। ওয়ার্কার্স পার্টির কথাই ধরুন, তারা শুরু থেকেই ছিল, কিন্তু সম্প্রতি আমাদের আন্দোলনের (হরতাল ও ধর্মঘট) ধরনের কারণে নিজেরাই সরে গেছে। কারণ একদিকে তারা সরকারের সাথে (যারা চুক্তি করছে) আছে, আবার অন্যদিকে এই চুক্তির বিরুদ্ধের আন্দোলনেও তারা থাকছে, এটা কেমন স্ববিরোধী হয়ে যাচ্ছে না। তাই তারা নিজেরাই নিজেদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছে। আমরা তাদের কিছুই বলি নি। আমরা যদি সরিয়ে দিতাম, তাহলে মানুষ বিভ্রান্ত হত এবং মূল এবং সরকারের পক্ষের উভয় ধারার গণমাধ্যমগুলোই কিন্তু জাতীয় কমিটি বিভক্ত হয়ে গেছে ইত্যাদি নানা কথা বলত। আর এই সমস্ত দিক চিন্তা করেই আমরা কিছু বলি নি। কিন্তু সরকার সমর্থক যারাই জাতীয় কমিটিতে ছিল, ওয়ার্কার্স পার্টি থেকে শুরু করে তারাই নিজেদের অবস্থান পরিষ্কার করেছে। অর্থাৎ তারা জাতীয় কমিটির প্রোগ্রামে অংশ নিচ্ছেন না। যার জন্যে সব মিলিয়ে আমি বলতে পারি যে, জাতীয় কমিটি চাচ্ছে, দেশের স্বার্থের পক্ষে যে সব মানুষ ও রাজনৈতিক শক্তি আছেন তারা সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে এ আন্দোলন করুক।

আর দেশের স্বার্থেই সাম্রাজ্যবাদের বিরোধিতা করা উচিত। কারণ সাম্রাজ্যবাদের বিপক্ষে না দাঁড়িয়ে কিন্তু জাতীয় স্বার্থ রক্ষার কোন উপায় নেই। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে কিন্তু আমরা এটা প্রতিটা পর্বে অনুভব করি। গোটা বিশ্বকেই তারা করতলে নিয়ে যেতে চায়।

নেহাল মুহাম্মাদ: প্রধানমন্ত্রী সরাসরি হুমকি দিচ্ছেন প্রকল্পের বিরুদ্ধে বেশি কথা বললে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দিবেন, এ প্রসঙ্গে আপনার মতামত?

মোশরেফা মিশু: প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয় যে, তিনি গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছেন। তিনি জনগণকে হুমকি দিয়েছেন তাদের বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেবেন। এর চাইতে স্বৈরতান্ত্রিক বক্তব্য আর কী হতে পারে। আমরা একে অত্যন্ত উদ্ধত এবং জনগণের স্বার্থ বিরোধী সরাসরি স্বৈরতান্ত্রিক অবস্থান বলে মনে করি।

নেহাল মুহাম্মাদ: ভারতকে বন্ধু দেশ মনে করছে জাতীয় কমিটির অন্তুর্ভুক্ত বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ। অথচ ভারত সরকার-ই সুন্দরবন বিনাশী (আন্দোলনকারীদের দাবিও এমন) রামপাল প্রকল্প বাস্তবায়নে আছে। তাহলে ভারত কীভাবে বন্ধু দেশ হয়? আন্দোলনকারী জাতীয় কমিটি-ই বা কীভাবে মোদী সরকারের কাছে রামপাল প্রকল্প বন্ধে পিটিশন করে?

মোশরেফা মিশু: আনু মুহাম্মদ কখনো-ই ভারতকে বন্ধু রাষ্ট্র বলেন না। কখনই বলেন নি। এ ব্যাপারে তার পরিষ্কার অবস্থান আছে। আমরা যে স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে খুব ইচ্ছে করে ভারতবিরোধী অবস্থান নেব, ব্যাপারটা কিন্তু এমন নয়। ভারতের বিরোধিতা কিংবা পক্ষপাত এমন কিছু নয় কিন্তু। যৌক্তিক এবং আমাদের জাতীয় স্বার্থের কারণেই আমাদেরকে ভারতের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের এখন যে আন্দোলন চলছে, আপনারা জানেন যে এনটিপিসি যে ১৩২০ মেগাওয়াটের প্রকল্প এখানে করছে, এই প্রকল্পটাই কিন্তু ভারতের বিভিন্ন রাজ্যেও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। এমনকি শ্রীলংকায় এনটিপিসি এর ৫০০ মেগাওয়াটের একটা প্রকল্পও কিন্তু সেখানকার কোর্ট জনগণের আন্দোলনের মুখে বন্ধ করেছে। এমনকি পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ, আমেরিকা-জাপান থেকে শুরু করে, চীন-জার্মানীর প্রায় সবাই-ই কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে সবাই সরে আসছে। অন্যান্য পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু আমাদের দেশে আমরা দেখতে পাচ্ছি যে ভারতের সহায়তা নিয়ে এখানে কয়লাভভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র করা হচ্ছে। ভারত যে প্রকল্প নিজের দেশে হতে দিচ্ছে না তা বাংলাদেশে করার জন্যে সহায়তা দিচ্ছে, তা তো মানুষকে ক্ষুব্ধ করবেই। আমরা মনে করি যে ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করবার মত কোন বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই। আই রিপিট ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করবার মত কোন বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই। অন্যান্য যে রাজনৈতিক দলের কথা বলছিলেন, সরকারের সহযোগী মহাজোটের কয়েকটি কথিত বামদল ওয়ার্কার্স পার্টি ও অন্যান্য, তারা নিজেরাই কিন্তু নিজেদের এ আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। কারণ জাতীয় কমিটি যেহেতু এ ভারতের আধিপত্যবাদ, দেশ ও জনস্বার্থ বিরোধী যে সমস্ত আগ্রাসী তৎপরতা তার বিপরীতে অবস্থান নিয়েছে এবং তার বিরুদ্ধে লাগাতার লড়াই করে যাচ্ছে। যার জন্যে এই যারা সরকারের সহযোগী ও ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করে নিজেদের আন্দোলন থেকে সরিয়ে নিতে বাধ্য হয়েছেন। যার জন্যে জাতীয় কমিটির সদস্য সচিবের ভারতের এ আগ্রাসন ও আধিপত্যের বিরুদ্ধে থাকবেন তার এমন একটা রাজনৈতিক অবস্থান-ই আমরা দেখতে পাচ্ছি।

নেহাল মুহাম্মাদ: রামপাল প্রকল্প বন্ধে এর বাস্তবায়নকারী আওয়ামী লীগ সরকারের কাছে আন্দোলনকারী জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আন মুহাম্মদ গত ২৬ জানুয়ারির আধাবেলা হরতালের সমর্থন চেয়ে সুন্দরবন রক্ষা আন্দোলনে পেরেক ঠুকে দিয়েছেন। যার বিরুদ্ধে আন্দোলন তার কাছেই সমর্থন চাওয়াটাকে কি রাজনৈতিক বালখিল্যতা বলে মনে হয় না আপনার?

মোশরেফা মিশু: (খানিক হেসে) আনু ভাই এ আন্দোলনের প্রধান সংগঠক। তাকে আমরা সামনে রেখেছি এ আন্দোলন করবার জন্যে। সব ব্যাপারেই আমরা দেখেছি তার দায়বোধ আছে দেশ ও জনগণের প্রতি। এ আন্দোলনের জন্যেও তার অনেক দায়বোধ আছে। আমাদের এই আন্দোলনে কিন্তু আনু ভাইয়ের শক্ত একটা ভূমিকা আছে। হরতালের সময়, ‘আওয়ামী লীগের সমর্থন চাই’ অত বেশি খেয়াল করে বলেন নি। এই বক্তব্য’র মাধ্যমে ‘আন্দোলনে পেরেক ঠুকে দিয়েছেন’ এভাবে দেখলে তার প্রতি কিছুটা অবিচার করা হবে। তিনি সবদলের-ই সমর্থন চেয়েছেন। বিএনপি আমাদের আন্দোলনে সমর্থন জানিয়েছে, এখন আমরা কি এর বিরোধিতা করব নাকি। আমরা চাইব দেশের সকলেই এতে যোগ দিক, আনু মুহাম্মদ সে অর্থে আওয়ামী লীগের কথা বলেছেন। আমার মনে হয় তার বক্তব্যে কিছুটা ভুল বুঝার অবকাশ আছে। তবু আমি ভুল না বুঝার আহ্বান করব।

নেহাল মুহাম্মাদ: আন্দোলনে বিএনপির সম্পৃক্ততা জাতীয় কমিটি মেনে নিতে পারে নি। এটা তাদের বেশ কিছু বক্তব্যে স্পষ্ট। আপনার কি মনে হয় না, এতে আন্দোলন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে? বিএনপি আন্দোলনে থাকলে জাতীয় কমিটির দাবি আদায়ে সুবিধা হতো, সরকারও চাপ বোধ করত, তাই নয় কি?

মোশরেফা মিশু: দেখুন, বিএনপি সম্পর্কে জাতীয় কমিটির অবস্থান বেশ পরিষ্কার। আমি মনে করি যে, জাতীয় কমিটির এ আন্দোলনের ব্যাপারেও বিএনপির অবস্থান পরিষ্কার। আমরা ’৯৮ সাল থেকে এ আন্দোলন করছি । বিএনপি যখন ক্ষমতায় ছিল, আপনি জানেন যে, ২০০৬ সালের অগাস্ট মাসে জাতীয় কমিটি এশিয়া এনার্জির বিরুদ্ধে দিনাজপুরের ফুলবাড়িতে, তাদের উন্মুক্ত কয়লা আহরণের বিরুদ্ধে আমরা ও এই এলাকার মানুষ মিলে যখন আন্দোলনে নেমেছিলাম, বিএনপি তাতে গুলি চালিয়ে আমাদের ৩ জনকে হত্যা করে; ফখরুল ও সালেহিন এবং অনেককে চিরতরে আহত করেছিল। অর্থাৎ বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন কিন্তু জাতীয় কমিটির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিল। এখন ক্ষমতার বাইরে আছেন বলে আমাদের সমর্থন দিচ্ছেন বলে মনে হচ্ছে। এবং ব্যাপক সংখ্যক মানুষ কিন্তু এভাবেই দেখবে। তাই তারা তাদের সমর্থন দিয়েছে, কিন্তু তা নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই।

নেহাল মুহাম্মাদ: আন্দোলনকারীদের সম্পর্কে সমালোচনা আছে যে তারা সরকারকে স্বস্তি দিতে বিভিন্ন সময় মাঠে নামেন। যাতে সরকার একটি সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে চাপে না পড়ে– এমনটি ভাবার যথেষ্ট সুযোগ জাতীয় কমিটি করে দেয় নি কি?

মোশরেফা মিশু: প্রশ্নই আসে না। আমি মনে করি না যে সরকারকে স্বস্তি দিতে আন্দোলন করছে। বরং বাংলাদেশের যে আন্দোলন সরকারকে সবচেয়ে বেশি বিব্রত করছে বা সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় যে আন্দোলন হচ্ছে তা হচ্ছে জাতীয় কমিটির এ আন্দোলন। এমনকি প্রধামন্ত্রীও বিভিন্ন সময়ে এ আন্দোলনে বিরক্ত হয়ে বিভিন্ন মন্তব্য “বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়ার মত” করেছেন । এমনকি বিভিন্ন মন্ত্রীও কিন্তু যাচ্ছেতাই বলছেন। আমরা মনে করি, বিএনপি প্রধান বিরোধীদল হওয়া সত্ত্বেও বিরোধী ধারার আন্দোলনের যে প্লাটফর্ম তৈরি করতে পারছে না, জাতীয় কমিটি তার কিছুটা হলেও পূরণ করছে। যার জন্যে এইভাবে দেখার কোন সুযোগ আছে বলে আমি মনে করি না।

নেহাল মুহাম্মাদ: ধন্যবাদ আপনাকে।

মোশরেফা মিশু: আপনাকেও।


নেহাল মুহাম্মাদ
নেহাল মুহাম্মাদ
ছাত্র , ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের । তার আগে কওমি মাদ্রাসার পাঠ চুকিয়েছেন । নিজের পাঠক পরিচয়ে বেশি স্বস্তি পান ! দায়ে ঠেকলেই কেবল লিখতে বসেন !

সর্বশেষ

নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা

জনপ্রিয়

মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
নীতুর লিপস্টিক
নীতুর লিপস্টিক