বাংলাদেশ
পরীক্ষামূলক প্রচার
28-Sep-2024
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
জাকারিয়া চৌধুরী
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
স্থান: শংকুচাইল বাজার হাইস্কুল। জনতা ব্যাংক শাখা। দ্বিতল স্কুলের নিচতলার সর্ব পশ্চিমের অংশ।
-
কাল: ১৯৮৭-৮৮ সালের কোন এক বসন্তের নিশ্চুপ সকাল।
-
পাত্র: ব্যাংক স্টাফ, দারোয়ান, অসংখ্য গ্রাহক ক্যাশিয়ার কাউন্টার থেকে লাইন ধরে স্কুলের পেছনে ছাত্রীদের প্রস্রাবের জায়গা পর্যন্ত চলে গেছেন। স্কুলের পুকুরের পাড় ভাঙ্গতে ভাঙ্গতে ব্যাংকের দরজা পর্যন্ত এসে গেছে বলা যায়। গ্রাহকদের চোখে মুখে নানান উৎকণ্ঠা, ভয়, আতংক, অস্থিরতা কাজ করছে। ব্যাংকে আমানত রাখা যায়, উত্তোলনের সময় শুরু হয় হুজ্জোত। গত ক'দিন তো কেউ-ই টাকা তুলতে পারেনি। ব্যাংকে ফান্ড নেই। এই ফান্ড জিনিসটা কী আমি বুঝি না। এইমাত্র একজন লোক এক হাজার টাকা জমা দিয়েছে। পরের জন এসছে দুইশ টাকা তুলতে। ব্যাংক সাফ বলে দিল ফান্ড নেই। আমি ভাবলাম, টাকা জমা মানে টাকাটা ভেতরের রুমে নিয়ে অনেক নিচে কোনো সুরঙ্গে ফেলে দেয়া হয়।...।...।............ যা আর তোলা যায় না। তা না হলে ফান্ড না থাকার কারণ কী ? আগের রাতে ঝড়ো হাওয়ার সাথে কয়েক মিনিটের বৃষ্টিতে লাইনের শেষাংশে প্রস্রাবের তীব্র ঝাঁঝ কাউকেই তেমন বিচলিত করেনি। ঘেরা দেয়া অংশটাও নেই হয়ে গেছে। গ্রাম গঞ্জে বস্তা ছালা দিয়ে ঘিরে টেম্পরারি মিনি টয়লেট যেখানে সেখানে বানিয়ে রাখা হত। এতে মেয়েদের আব্রুর সামনের অংশ নিবারণের চেষ্টা করা যায়।
-
মায়ের একাউন্টের চেক হাতে দাঁড়ানো কৌতুহলী এক কিশোরী খেয়াল করল তার পায়ের কাছেই একটা শীমের বীচি পড়ে আছে। এখানে এমন বীচি আসলো কোত্থেকে ? সে বীচিটা হাতে নিয়ে তার লাল জামায় মুছতেই এর চামড়া খসে ভেতরের অংশটা মাটিতে পড়ে গেল। মেয়েটি বজ্রাঘাতের মত স্থির হয়ে গেল বিশেষ একটা কারণে। তার দুই হাত এবং জামা থেকে তীব্র গুয়ের গন্ধ আসছে। এ বীচি কোনো মেয়ের এক ফোটা পায়খানার অংশ ছিল। কিশোরী মেয়েদের এটা হয়, সে জানে।
-
মেয়েটি হিমালয়ের মত শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে। কারো দিকে তাকানোর সাহস তার নেই। কথা হল, এই মুহূর্তে ঠিক কতজন তার দিকে তাকিয়ে আছে এ চিন্তাটা সে করতে পারছে না। লাইন ছেড়ে যাওয়াও সম্ভব না। গত দু'সপ্তাহ পর আজ ব্যাংকে এক লাখ বাইশ হাজার টাকা এসেছে। পাঁচশ টাকার উপরে তুলতে হলে উপর মহলে যোগাযোগ থাকতে হয়। অবশ্য এক সাথে এতো টাকা তুলবার সাধ্য আছেই বা ক'জনের !! ম্যানেজার সাহেব এসে টাকা বের না করাতক মোটা বেটে অবিবাহিত বয়স্কা ক্যাশিয়ার জানিয়ে দিল তার অপারগতার কথা। এই মেয়ে নার্ভাস। বেলা ১১ টার দিকে ম্যানেজারকে জনতা ব্যাংকের এই শাখায় ঢুকতে দেখেই নার্ভাস মেয়েটি তাড়াহুড়ো করতে যেয়ে চেয়ার সহ পেছন দিকে পড়ে গেল। এতে তার নীল জর্জেট শাড়ি হাঁটু পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। জিইসি ফ্যানের তীব্র বাতাস শাড়ির পাড়কে কোমর পর্যন্ত তুলে দিল। পাশে বসা সিনিয়র মহিলাটা টিপ্পনী কেটে বলল, তোমার উচিত আগে থেকেই ভল্টরুমে গিয়ে শাড়ি খুলে শুয়ে থাকা। এ কাণ্ড এখানে নিত্য ঘটনা। বাট্টু নার্ভাস মহিলার চরিত্র ভাল। খুবই ভাল। স্যারকে ঢুকতে দেখলে কেন যে রোজ এমনটা হয় এর হদিস কেউ বের করতে পারেনি।
-
আনুমানিক ৩৫ বছর পরের কথা -
-
এখন টাকা ক্যাশ ট্রান্সফার হয় মিলিওন হিসেবে। ইলেকট্রনিক ট্রানজাঙ্কশান এ দেশে সবচে জনপ্রিয় মাধ্যম। ৮০ 'র দশকের সেই জনতা ব্যাংক এখন আর আছে কিনা কে জানে !! বর্তমান ব্যাংকিং চ্যানেলে এক শাখা থেকে অন্য শাখা বা ব্যাংকে টাকা ট্রান্সফার হয় থার্ড পার্টির মাধ্যমে। বিভিন্ন নিরাপত্তা সংস্থা সাধারণত এসব দায়িত্ব পালন করে থাকেন।
যাই হোক, ঢাকার শান্তিনগর ব্রাঞ্চে এক দুপুরে কোনো রকম টেনশন ছাড়াই গোটা দশেক অপেক্ষারত ক্লায়েন্ট একযোগে উঠে দাঁড়ালেন। বাট্টু অবিবাহিত রান সর্বস্ব এক মহিলা কাস্টমার /ডাকাত কী করবে বুঝতে না পেরে নিজের বসে থাকা চেয়ারের উপর ইলেক্ট্রন সর্ববরাহের মূল সুইচটি অফ করে অন্ধকার ফ্লোরে থলথলে শরীর নিয়ে পড়ে গেল। তার পায়ের কাছে একটা স্ট্যান্ড ফ্যান এতক্ষণ তার দিকেই বাতাস দিয়ে যাচ্ছিল। সে ভয়ে তার করণীয় ভুলে গেছে, ফ্যানের বাতাস বন্ধ হয়ে যাবার আগে সে টের পেয়েছে আজ ভুলে সে প্যান্টি পরে আসেনি। এসির শেষ ঠাণ্ডা বাতাসটা তার নরম কোমল অংশে শিরশিরি দিয়েছে।
-
একজন ডাকাত ভুল জায়গায় টর্চ জ্বালিয়ে ওই একই অংশটা দেখল যা দেখতে গিয়ে এ লেখক রাঙ্গামাটিতে চড় খেয়ে আপন স্ত্রী'র হাতে সোপর্দ হয়েছিল। ডাকাত লোকটি বলল- ওমা !!!! এই পথ ধরে তোমাকে আনন্দের তীর্থে নিতে যতক্ষণ সময় লাগবে ততক্ষণ সময় আমাদের ডাকাতি করতেও লাগবে না। মেয়েটি অজ্ঞান বলে কিছু শুনতে পেল না।
বরুণ স্যার আমাদেরকে পুরো অপরেশনের সময় দিয়েছেন মাত্র সাত মিনিট। ডাকাত দল মাইক্রো নিয়ে চলে গেল। তাদের সামনে পেছনে বেশ লম্বা একটা অংশ ক্লিয়ার রাখা হয়েছিল আগে থেকেই। ব্যাংকের সেকেন্ড অফিসার ম্যানেজারের রুমে ঢুকে দেখল দুটো তাজা বীচি ফ্লোরে পড়ে আছে। ম্যানেজারের হুঁশ আছে কী নেই বুঝা যাচ্ছে না। তাকে পানি ঝামটা দিয়ে জাগিয়ে তোলা হলে সে প্রথমেই বলল- ডাকু সর্দার আমার বীচি দুটো বিট লবন দিয়ে খেয়ে ফেলেছে। আমার হারানো যৌবন .................. আ আআ উ উ উ .........
-
সে অফিসার: স্যার প্লিজ, বিচলিত হবেন না। এ এ এই যে নিন। ওরা অতো নির্দয় নয় স্যার। ফ্লোরে ফেলে গেছে। স্যার ৭ কোটি খায়া গেছে !! মিডিয়া পুলিশ এলো বলে।
-
ম্যানেজার: বীচি ফেরত পেয়ে-ই ম্যানেজারের চোখে পড়ল থলথলে রান ওয়ালা বাট্রু মেয়েটি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছে। ফ্যান এসি আবার চালু হয়ে গেছে। 'বারো কোটি বলে যাও- খুশির অতিশায্যে ম্যানেজার বললেন। আর শুনো, ওই লাল সুইচ যা আমার চেয়ারের সামনে পা বরাবর সেটি আগে অফ করো। ডাকাতি হয়েছে সেটা-ই আসল............ যা বলব তা-ই সত্য। শুনো সুইচ অফ করবে তার ছিঁড়ে, বাটন টিপে নয়।
-
মিডিয়া পুলিশ সাংবাদিক এলো এক যোগে----
-
ম্যানেজার কাঁপতে কাঁপতে বললেন, আমার কাছে ১১ কোটি টাকার একটা ব্রাঞ্চ রিকুইজিশন এসেছিল। সেজন্য প্রাথমিকভাবে কাউকে-ই সন্দেহ করার সুযোগ পাইনি। অন্যদিকে এরা সকলেই ব্যাংক সংশ্লিষ্ট, না মানে সংশ্লিষ্ট বলে মনে হয়েছে... বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে সুরেশ আস্তানা আসছেন। বাকি কথা তিনি বলবেন বলে-ই চিৎকার করে উঠলেন !! মহিলার শাড়ির নিম্নাংশটা ফ্যানের বাতাসে আবারও উঠানামা শুরু করেছে !!
-
পুলিশের টিবি টিম কাউন্টার এ্যাটাকের বীরত্ব দেখিয়ে তিন ঘণ্টায় ৬ কোটি টাকা উদ্ধার করেছে বলে শেষ খবর পর্যন্ত জানা গেছে। আরও সাত ঘণ্টা পর তারা দেড় কোটি টাকা সরকারের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে শেষ খবর পর্যন্ত খবর এসছে। কেউ কেউ বলছে এটি টিবি টিমের ডাবল ডাকাতি। যারা নিয়ে গেছে তারা নিল কিছু , যারা উদ্ধার করেছে নিল এক ভাগ , যারা সরকারের পক্ষে গ্রহণ করল তারা পেল ম্যানেজার আর তার সরকারি লুটের ভাগ। একে বলে মিউচ্যুয়াল সেক্স, থুক্কু উচ্চতর গণিতে এর নাম সাইক্লিক অর্ডার। অর্থনীতিতে ব্যাংক ডাকাতিকে কী বলে জানি না। উচ্চতর গণিতে এভাবে লেখা থাকে-
( a-b )( b-c )(c-a )
a ভাগ দিয়েছে b কে
b ভাগ দিয়েছে c কে
c ভাগ দিয়েছে a কে।
* পাঠকস, আবারও বলছি, সবটা-ই কাল্পনিক।
জাকারিয়া চৌধুরী
জাকারিয়া চৌধুরী
ডাক্তারি করেন, রাজনীতি করেন, লিখেন। থাকেন মিশন হসপিটালে। পড়াশোনা ঢাকা ডেন্টাল কলেজ।

লেখকের আরো লেখা

সর্বশেষ

নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা

জনপ্রিয়

মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
নীতুর লিপস্টিক
নীতুর লিপস্টিক