বলাকা হলটা আরও উন্নত করা উচিত। সিটগুলা ভাল না। বইতে গেলে কেমন একটা ভয় কাজ করে, এই বুঝি পইড়া গেলাম।
কালকা সিনেমা দেখতে গেছিলাম। ভুবন মাঝি।
সিনেমাটায় ৩ টা সময়রে ফ্রেমে আটকাইতে চাইছেন পরিচালক ফাখরুল আরেফিন খান। আমাগোর ৭১, ২০০৪ আর '১৩। সময়গুলার মধ্যে একটা যোগও সৃষ্টি কইরা দিছেন।
প্লটটা এমন; '৭১ এর নাটক করত এমন একজন, নুহির নাম (পরমব্রত) (এইটাই শুনছিলাম, একটু পেছন দিকে বসাতে নামটা স্পষ্ট আসে নাই। আমার বান্ধবীও আমারে শেষের দিকে নামটা জিগাইলে, এইটাই বলছিলাম।) পড়াশোনার লিগা কুষ্টিয়ায় যায়। অনার্স শেষ করব। চাচার বাসায় গিয়া উঠে। খালাত বোন ফরিদারে (অপর্ণা ঘোষ) ভাল্লাগে তার, হয়ত প্রেমও আগের থিকা ছিল। একলগে নাট্ট্য করত।
তো, নুহির যুদ্ধ-রাজনীতি নিয়া উদাসীন, খালি নাটক নিয়াই পইড়া থাকতে চায়। ফরিদা তার ভিত্রে রাজনৈতিক বোধ জাগায় তুলনের চেষ্টা করে, দেখায়; নাটকের ভিত্রেও রাজনীতি আছে তুমুল কইরা। এতে কাজ হয়। নুহিরে ক্রমশ জড়ায় পরে রাজনীতিতে। মিছিল মিটিং করে।
এই সময় কুষ্টিয়ায় পাক-হানাদাররা আইলে বন্ধু মিজানরে (মাজনুন মিজান) নিয়া নুহির যুদ্ধে জড়ায় পড়ে। এই যুদ্ধে একজন মুক্তি সেনার মৃত্যু ঘটে। নুহিরের বাউলা মন মৃত্যু সইতে পারে না। যুদ্ধের আগ্রহ থাইমা যায় তার। ফরিদা আবার জাগায় তোলে।
এক সময়ে কোলকাতায় যায় নুহির। ওইখানে যুদ্ধের ট্রেনিং দিয়া দেশে ফির্যা আসে। দেশের এক যুদ্ধে ওরে গ্রেনেড ছোঁড়নের দায়িত্ব দেওয়া হইলে ওয় বিবেকের তাড়নায় ছুঁড়তে পারে না, তাতে মানুষ মারতে হবে বইলা।
এই তাড়নাবোধ থেকাই সে আহত হয়। ভারতে চিকিৎসার লিগা যায়। দেশে ফির্যা আইসা দেখে ফরিদা এক রাজাকার সর্দারের (মামুনুর রশিদ) হাতে রেইপড হইছে। এই রাজাকাররে পরে মাইরা ফেলে নুহির, মাথায় গুলি কইরা।
২০০৪ এ এক গায়ক, (নামটা জানি না, লগের ফ্রেন্ড কইছিল ওয়াকিল আহমাদ নাকি নাম) ডকু মকু বানায় আর কি। বান্ধবীরে নিয়া একটা ডকু বানানির লিগা কুষ্টিয়ায় যায়। মুক্তিযোদ্ধা বাউল আনন্দ সাঁইরে নিয়া। বানায়ও, প্রকাশ করে না।
২০১৩ তে আনন্দ সাঁই মারা গেলে সৎকার নিয়া একটা যা তা কাণ্ড ঘটে। স্থানীয় মাদ্রাসার হেড মৌলবি বাউলগোর কাজে বাগড়া দেয়, বাউলেরা মাইনা নিতে চায়। কিন্তু দুই তরুণ এই ব্যাপারটা নিয়া রিপোর্ট করতে গেলে ওই মৌলবীর লাঠিয়াল এদের মাইরা বাইর কইরা দেয়।
তাছাড়া সময়টাও আরেকটা যুদ্ধকালীন পরিস্থিতির মতই। কাজের-চিন্তার স্বাধীনতা পাইতেছিল না কেউ। কেমন আরেকটা দম বন্ধ করা সময়!
এই টাইমেই ওই যে ডকুটা, ’০৪ এ যেটা করা হইছিল, এক মিডিয়া হাউজ প্রকাশ করে। মিল্যা যায় ঘটনা, এই আনন্দ বাউল-ই আগের নুহির। ফরিদারেও খুঁইজা পাওয়া যায়। রাজাকার গ্রেফতার হয়।
এই-ই কাহিনী।
প্লট-ভাবনা ভালই ছিল সিনেমাটার। কিন্তু সমস্যা হইতেছে ৭১এর আবহ আনতে পারে নাই। কস্টিউম-টস্টিউমে বেশি আধুনিক হয়া গেছে। '৭১ বইলা বিশ্বাস করতে ইচ্ছা করব না। তিনটা সময়রে প্যারালালি টাইনা নিয়া চলনে দর্শকের বিরক্তি আসে।
ক্যামেরার কাজ ভালই লাগছে । (যদিও আমি অত ভাল বুঝি না)।
মাদ্রাসার মোল্লারে রাজাকার বানাইতেই হবে কেন? মেসওয়াক করতেছে, লম্বা দাড়ি এই টাইপের মানুষেরাই কি খালি রাজাকার ছিল! রাজাকারদের সবাই-ই কি পরে ধর্ম ফাইদা নিয়া বসছে! তা তো না, প্রগতি ধইরা আছে এই টাইপের মানুষদের জীবনী ঘাটলেও অতীতের রাজাকার জীবন পাওয়া যায়। এই স্টেরিওটাইপ ধারণাগুলা ক্ষতিকর। এটারেও চিন্তার গলা টিপ্যা ধরণ লাগে।
সঙ্গীতায়োজন ভাল ছিল । এখনও কানে বাজতেছে “জলে কেন ডাঙ্গায় আমি ডুবতেও রাজি আছি; যদি ভাসিয়ে তোল তুমি! কালিকাপ্রসাদের স্বর্গপ্রাপ্তি হোক!
পরিচালক সিনেমার ভিত্রে আরেকটা সিনেমা (হরেক রকমের দৃশ্যায়ন। ফার্সি ‘সিহ নুমা’র অর্থ) তৈয়ার করতে পারছেন।
দেইখেন আর কি!