বাংলাদেশ
পরীক্ষামূলক প্রচার
28-Sep-2024
​কারাগারনামা
সেলিম তাহের
​কারাগারনামা

 ১.

তখন প্রায় সন্ধ্যা। বসার ঘরের মাঝখানে ক্যাবলার মতো দাঁড়ায় ছিলাম। সোফায় আর ফ্লোরে প্রায় সাত-আটটা ছোট বড় ফুলের বুকে বা তোড়া। জন্মদিন গেলো তিন দিন আগে। আমি আইলসা টাইপ মানুষ। তিন দিনেও এইসব ফুলের কোনো সুরাহা করতে পারি নাই। জন্মদিনের ফুলগুলা আমার কিছু প্রিয়জনের পাঠানো, তো এখন আমি কি করি? তিন দিন আগের বাসি ফুলে হালকা পঁচন ধরছে। ফালায়া দেয়া ছাড়া গতি নাই, আবার ফেলতেও খারাপ লাগতেছে। খাড়ায়া খাড়ায়া এইসব সাত-পাঁচ ভাবতেছি, এমন সময় ডোর বেইল বাইজা উঠলো। এক বার, দুই বার, তিন বার।আমি একা থাকি দুই রুমের একটা এপার্ট্মেন্ট-এ। রানিং কোন বান্ধবীও আপাততঃ নাই যে অভিসারে আইবো। এই অসময়ে তাই কে আসতে পারে, এইসব ভাবতে ভাবতে মেইন ডোরের পিপ হোল-এ চোখ রাখালাম। দেখি তিনটা ব্যাটা আর একটা বেটি। পোলিশ ইউনিফর্ম পরা। 

জানতাম তারা আজ কাল পরশু বা এক বছর পরে হইলেও আসবে। অচেতন বা অবচেতনে তাই একটা মানসিক প্রস্তুতি সবসময়ই ছিলো। তাই ডরানের কিছু ছিলো না। আমি একটা নৈর্ব্যক্তিক মন নিয়া নির্বিকারভাবে দরজা খুইলা দিলাম।

তারা ঢুইকাই যথাযথ সম্মানের সাথে ইংরাজীতে জিগাইলো, “আপনি কি অমুক?”

আমি, “হা (ইংরেজিতে)।

পোলিশ, “এই বাসায় ভাড়া থাকেন (ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে)?”

আমি, “আমার সাথে জর্মনে কথা কইতে পারেন”।

হাতে ধরা আমার এই দেশে অবস্থানের গত বারো বচ্ছরের ইতিহাস পাতিহাঁসের ডকুমেন্ট উল্টাইতে উল্টাইতে এক ব্যাটা এইবার জর্মন ভাষা শুরু করলো, “যাক, কমিউনিকেশানে সুবিধা হইলো তাইলে।“

কইলাম, “ভাড়া না, লিজ নিসি এই বাসা আজ চার বচ্ছর হইলো”।

- একা থাকেন?

- হাঁ।

- (হাতের কাগজে চোখ রাইখা) তা আপনি তো বারো বচ্ছর হইলো এই দেশে আছেন। Niederlassungsbewilligung (পার্মানেন্ট রেসিডেন্স) ও ছিলো। পাসপোর্ট-ও তো নিলেন না। কোনো সমস্যা?

-নো সমস্যা। ইচ্ছা করে নাই।

এই কথা শুইনা পোলিশগুলা গোল গোল চৌক্ষে আমার দিকে তাকাইলো। দৃষ্টিতে “এই হালার মাথার তার ছিড়া” টাইপ ভাব।

এই ফাঁকে বইলা রাখি, তখন (এখনকার আইন জানি না) অস্ট্রীয়াতে ভিসা সহকারে লিগ্যালী পাঁচ বচ্ছর থাকনের পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্স-এর জন্য আবেদনের যোগ্যতা অর্জিত হয়। আর ই ইউ পাসপোর্টের জন্য লিগ্যালী টানা দশ বচ্ছর থাকনের পর আবেদন করা যায়। পার্মানেন্ট রেসিডেন্স পারমিট তারা পাঁচ বচ্ছরের জন্য দিতো। পারমিট এক্সপায়ার করার পর আবার আবেদন করতে হইতো।

এক পোলিশ তখন গলা খাঁকাড়ি দিয়া ঘোষণা আকারে বয়ান ঝাড়লো, “আপনার পার্মানেন্ট রেসিডেন্স ২ বচ্ছর আগে এক্সপায়ার করছে। তারপর বার বার চিঠি দিবার পরও আপনি নতুন কইরা আবেদন করেন নাই। গত তিন মাস আগে শেষ চিঠিতে আপনারে চূড়ান্ত নোটিশ প্রদান করা হইছিলো। এর মানে হইলো…”

আমি তারে থামায়া দিয়া কইলাম, “সেইসব চিঠি আমি পাইছি এবং ছিঁইড়া ফালায়াও দিছি।“

আমার এই কথা শুইনা তাগো মুখের ভাব যেন বা প্রথমে হালকা গুলাপী, তারপর টকটকা লাল রং ধারণ করলো।

এইবার যেন সাত আসমান থেইকা ঘোষণা আইলো, “গত দুই বচ্ছর ধইরা বার বার তাগাদা দিবার পরও আপনি পার্মানেন্ট রেসিডেন্সি বর্ধিতকরণের আবেদনে সাড়া দেন নাই। অর্থাৎ গত দুই বচ্ছর ধইরা আপনি এই দেশে বেআইনী ভাবে বসবাস করতেছেন। আস্ট্রীয়ান আইনের অমুক ধারার তমুক উপধারা মোতাবেক আপনাকে তাই আইনের আওতায় আনা হইলো। আপনারে আমাদের লগে যাইতে হবে।”

আমি নির্বিকার ভাবে কইলাম, “ঠিক আছে। কিন্তু এই এক কাপড়েই যাবো?”

-না,  আপনি কিছু কাপড়, আন্ডি, স্যান্ডেল আর টুথব্রাশ একটা ব্যাগে ভইরা নেন।“

আমি বেডরুমে আইসা কাপড় গুছাইতেছি। দেখি সাথে সাথে তাদের মধ্যে দুইজনও আমার বেড রুমে আইসা ঢুকলো।

আমি কইলাম, “আমার প্রাইভেসি নষ্ট হইতেছে”।

তারা হাইসা কইলো, “এই সমস্ত কেইসে বিদেশীরা জানালা খুইলা লাফ দিয়া ভাগার চেষ্টা করে। কিন্তু আপনি অমন করবেন না জানি। এতো বচ্ছর ধইরা এই দেশে আছেন, পড়াশুনাও এখানে শেষ করছেন, ভালো জর্মন পারেন, কিন্তু তারপরও…”

আমি তাগো একটা আস্বস্তের হাসি ছুঁইড়া দিয়া ব্যাগ গুছায়া বাসায় থাকা নগদ কিছু ইউরো আর মোবাইলটা পকেটে ঢুকাইয়া কইলাম, “আমি রেডি”।

আমার ওই সন্ধ্যার ঘটনার তারিখ ৬ সেপ্টেম্বর, ২০০৪।

২.

ভিয়েনাতে সেবার বরফটা যেন একটু বেশিই পড়ছিলো। চারিদিকে সাদা চাদরে ঢাকা। জমাট বান্ধা ঠাণ্ডা। দূরে একটা পার্কের মাঠে অনেকগুলা কাউয়া ঠুকরায়া ঠুকরায়া কী যেন খায়। ইউরোপের কাউয়ারা আমাদের দেশী কাউয়ার মতো সুইট না। তারা বিশাল দামড়া আর কুচকুচে কালা। প্রায়ান্ধকারেও সাদা চাদরে ঢাকা কালো বিন্দুর মতো কাউয়াগুলারে দেইখা মনে হইলো ক্যানভাসে আঁকা কোনো স্যুররিয়াল চিত্রকর্ম দেখতেছি।

সেই ঠাণ্ডার মধ্যে তারা আমারে এসকর্ট কইরা নিয়া গাড়ির ব্যাকসিটে বসাইলো, আর তাদের মধ্যে দুই ঠোলা আমার দুই পাশে। গাড়ি চলতে লাগলো। আমি তাগো মাঝখানে ঝিম মাইরা বইসা আছি আর তাগো টুকটাক বাক্যালাপ শুনতেছি। বাক্যালাপের বিষয়, ওয়েদার আর অস্ট্রীয়ান বুন্দেসলীগা।


জেলখানাটা ভিয়েনা সিটির একদম চিপায়। ঘোর ঠাণ্ডায় রাস্তা ফাঁকা। তাই আমাদের পৌঁছাইতে বেশি সময় লাগলো না। জেলখানার বিশাল মেইন ফটকের ছোট একটা পকেট গেইট দিয়া আমরা ভিতরে ঢুকলাম। কিছুদূর হাঁইটা গিয়া আসলাম একটা বিশাল রিসেপশান জাতীয় ডেস্কের সামনে। ডেস্কের পিছনে মোছওয়ালা এক ঠোলার সামনে আমারে দাঁড় করানো হইলো। নিজেরে তখন কেন জানি একটা ক্রিমিনাল ক্রিমিনাল লাগতেছিলো। প্রথমেই আমার ওয়ালেট (ওয়ালেট-এ ব্যাংকের কার্ড, আড়াইশ’র মতো ইউরো, Meldezettel সহ দরকারী কিছু ভিসিটিং কার্ড ইত্যাদি), বাসার চাবির গোছা আর মোবাইল জমা দিতে হইলো।

তো সেই মোছুয়া আমার কাগজপত্রের ফাইল দেখতে দেখতে আমারে ইতং বিতং গদবাঁধা কিছু প্রশ্ন করলো। তারপর এক ঠোলা আইসা আমারে একটা চার ফুট বাই আট ফুট প্রকোষ্ঠে ঢুকাইয়া দিয়া উধাও হইলো।

প্রকোষ্ঠের মধ্যে বসবার জন্য একটা ছোট্ট বেঞ্চ। আমি গিয়া বসলাম তাতে। আধা ঘণ্টা যায়, এক ঘণ্টা যায়, দুই ঘণ্টা যায়, এমন কী তিন ঘণ্টাও পার হইয়া গেলো, কিন্তু তাগো কারও আসবার কোনো নামগন্ধ নাই। ডর নয়, আতঙ্ক নয়, সামনে কী অপেক্ষা করতেছে-আমার সেই চিন্তাও নাই। নিজেরে শুধু সেলফ কাউন্সিলিং করতেছি- সব ঠিক হইয়া যাবে, সব ঠিক হইয়া যাবে। কিন্তু ঘণ্টা তিনেক পার হবার পর ভিতরে ভিতরে আমার এক নিদারুণ অস্থিরতা শুরু হইলো। সেন্ট্রাল হিটিং-এর মধ্যে বইসা বইসা শরীর আমার ঘাইমা একশেষ। গায়ের পুরু লেদার জ্যাকেট আর পুলওভারটা খুইলা ফালাইলাম। জীবনে এই প্রথম যেন দীর্ঘ অপেক্ষার উথাল পাথাল যন্ত্রণা আমারে গিলা খাইতে লাগলো!

​​আরও কতক্ষণ এইভাবে কাটলো, মনে নাই। হঠাৎ দরজা খোলার আওয়াজ। আমি যেন হাঁপ ছাইড়া বাঁচলাম। এক মামু আমারে নিয়া রওয়ানা হইলো। হাতে ধরায়া দিলো একটা কম্বল, থালা-বাটি আর একটা গ্লাস। আর ধরায়া দিলো স্ন্যাকস্‌এর একটা প্যাকেট। আমি তখন ছিলাম বিড়িখোর। আমারে খালি বিড়ির প্যাকেটটা সাথে নিতে দিলো। মানবতা বইলা কথা!

এসব হাতে নিয়া প্রথমেই যা আমার মনে আইলো, তা হইলো, এই দৃশ্য আমি হলিউড মুভিতে অনেকবার দেখছি- লোটা কম্বল হাতে ধরায়া নায়ক বা ক্রিমিনালরে নিয়া জেলের সেল-এ নিয়া যাবার দৃশ্য।

​​লিফট দিয়া তিন বা চার তলায় আসলাম আমরা। প্রশস্ত প্যাসেজ। আর তার ডান দিকে সারি সারি জেলখানার সেল। একটা সেল খুইলা ঢুকায়া দেয়া হইলো আমারে। সেলটা বর্গাকৃতির, আয়তনে বেশ বড়। এক কোণায় টয়লেট। সেল-এর দুইদিকে দুইটা কইরা মোট চারটা দুইতলা বিশিষ্ট বাঙ্কার। আমার শুইবার যায়গা হইলো একটা বাঙ্কারের দুই তলায়। জেলের নিয়ম অনুযায়ী ঠিক রাত নয়টায় তারা সেল-এর বাত্তি নিভায়া দেয়। তখনও মনে হয় নয়টা বাজে নাই। আমি চারদিকে তাকায়া দেখলাম, চ্যাংড়া আর মধ্য বয়সী মিলায়া মোট ছয়জনের ছয়জোড়া চোখ চিকন দৃষ্টিতে আমারে মাপতেছে। তাদের মধ্যে একজন কালো আর বাকীরা সাদা। আমি তাদের দিকে তাকায়া একটা মাই ডিয়ার মার্কা হাসি দিলাম। এতে তাদের মন গললো কী না, বুঝলাম না।

-“ইন্ডিয়ান?” প্রথমজনের প্রশ্ন।

-“না, বাংলাদেশী।“

-“এইটা আবার কই (ভাঙ্গা জর্মনে)?”

-“ইন্ডিয়ার পাশেই।“

-“অ!”

 তারপর নীরবতা।

 আমি আমার বাঙ্কারের বিছানায় উইঠা তাদের দেয়া নতুন একটা সাদা চাদর আর ক্ষ্যাতা-কম্বল বিছাইলাম। একজন কী মনে কইরা আগায়া আইসা কইলো, “এইখানে এমনে চাদর পাতে না।”

-এই বইলা সে চাদরের চার কোণায় চারটা গিট্টু মারলো, তারপর কোণার গিট্টুগুলা ম্যাট্রেসের চার কোণায় ভালো মতো ঢুকায়া দিলো। চাদরটা এইবার টান টান হইয়া বিছানায় লাইগা গেলো। বিছানার চাদর পাতার তার এই কৌশলে আমি আক্ষরিক অর্থেই অভিভূত হইলাম। কিন্তু পেটে তখন জম্মের ক্ষুধা। আমি স্ন্যাকস্‌এর প্যাকেট খুইলা খাওয়া শুরু করলাম। তারপর টয়লেটে যায়া দেখি, টয়লেটের দফারফা অবস্থা! মানে নোংরা। পৃথিবীর সকল জেলখানার টয়লেটেরই মনে হয় এই অবস্থা থাকে। বাস্তবতা মাইনা নিয়া কাজ সাইরা ফের বিছানায় আসলাম। তার একটু পরেই সেল-এর বাত্তি নিভলো।

 ৩.

খুব ভোরে কার জানি চিল্লা ফাল্লায় ঘুম ভাঙলো। দেয়ালে ঝুলানো একটা বড় ওয়াল ক্লক-এ দেখি সকাল সাড়ে সাতটা বাজে। নাস্তা আইছে, আমারে তাই নাস্তা করতে ডাকে। সেল-এর ঠিক মাঝখানে বিশাল আলম্ব একটা কাঠের টেবিল। তাতেই ফ্লোরে বইসা সারাদিনের খাবার খাওনের ব্যবস্থা।

জেলখানায় ঘড়ি ধইরা সকালের নাস্তা সাতটা থেইকা সাড়ে সাতটার মধ্যে, দুপুরের লাঞ্চ সাড়ে বারোটা থেইকা একটার মধ্যে, আর রাতের ডিনার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটা থেইকা আটটার মধ্যে দেয়া হয়। সকাল নয়টার মধ্যে গণগোসলখানায় গোসল, তারপর নীচতলার বিশাল একটা লাইব্রেরীতে ইচ্ছামাফিক বই পড়ার ও বই নিয়া আসার সুযোগ, বিকাল চারটা থেইকা এক ঘণ্টার জন্য নীচের বড় লন-এ ঘুরাঘুরি, সাথে আছে বাস্কেট বল আর টেবিল টেনিস খেলার চত্বর। ঠিক বিকাল পাঁচটায় সবাইরে সেল-এ ফিরায়া নিয়া লক আপ করা- এই হইলো সারা দিনের রুটিন। 

আর হাঁ, প্রতি ফ্লোরে আছে ছয়টা কইরা ফোন বুথ আর এক তলায় একটা Kiosk/Grocery বা মুদিখানা। নিয়ম হইলো, জেলের বাইরে থেইকা টাকা আনাইয়া জেল সুপারের কাছে নিজ নিজ একাউন্টে টাকা জমা রাখা যায়। সেই টাকা থেইকা প্রত্যেকে সপ্তাহে ৬০ ইউরো তুলতে পারবো। এর বেশী না। মুদিখানা থেইকা চা-কফি, বিড়ি, সফট ড্রিঙ্কস, বিস্কুট, চিপস সহ আরও নানা প্রকার মুদি দ্রব্য কিনা যাইবো তাতে। আর পাওয়া যাইতো প্রি-পেইড ফোন কার্ড। বলাই বাহুল্য, সেই সময় ফ্রি ফ্রি কথা কওনের বিভিন্ন এ্যাপস ছিলো না। স্মার্ট ফোনের যুগ আরও বছরখানেক পরে শুরু হইছিলো।

যাই হোক, আমি দাঁত ব্রাশ কইরা নাস্তা সারলাম। নাস্তা, লাঞ্চ আর ডিনারের মেন্যুর বিস্তারিত বিবরণ আর দিলাম না, তবে সেগুলা মোটামুটি খাইবার যোগ্য এবং সহজ পাচ্য। যেহেতু আমি এই সেল-এর একমাত্র মুসলমান, তাই পোর্কযুক্ত নন-মুসলিম আর পোর্ক বর্জিত মুসলিম হালাল খাবার সরবরাহের চয়েজ আমারে দেয়া হইলো। আমি দ্বিতীয়টাই চয়েজ করলাম।

বিশাল এই সেল-এ দুইটা মাত্র জানালা, কিন্তু তিন স্তরের লোহার গ্রীল দিয়া এমন ভাবে আটকানো যে কারো বাপের সাধ্যি নাই সেই জানালা হাতের শক্তিতে খুলে। আর আছে প্রায় দশ ফুট উঁচু সিলিং বরাবর একটা ছোট্ট স্কাইলাইট। সেল-এর ফটক বন্ধ থাকলে দিনের বেলা যা এক চিলতে আলো আসে, ওই স্কাইলাইট দিয়াই আসে।

​​হঠাৎ লক্ষ করলাম, এক হাড্ডিসার চ্যাংড়া পোলা তার বিছানায় চিৎ হইয়া চোখ উল্টায়া পইড়া আছে। খোঁজ নিয়া জানলাম সে নাকি আজ ১৬ দিন হইলো হাঙ্গার স্ট্রাইকে আছে। পানি ছাড়া আর কিছুই খায় না। এই স্ট্রাইকের কারণটা কী,  একজনরে জিগায়া যা শুনলাম তাতে আমার চক্ষু মাথায় উঠলো!

কোনো কয়েদী যদি হাঙ্গার স্ট্রাইক করে, তবে দিনে দিনে তার নাকি রক্তের প্ল্যাটিলেট বা ওই জাতীয় কিছু কমতে শুরু করে। অস্ট্রীয়ার জেল আইন মোতাবেক (সম্ভবতঃ এই আইন ইউরোপের ধনী দেশগুলার সকল কারাগারের কয়েদীদের জন্যই প্রযোজ্য) তার রক্তের প্ল্যাটিলেট একটা নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে চইলা আসলে মৃত্যু ঝুঁকি নাকি বাইড়া যায়। সেই ক্ষেত্রে জেল কর্তৃপক্ষ তারে বিনা প্রশ্নে মুক্তি দিতে বাধ্য। প্রতি দুই দিন অন্তর ডাক্তার আইসা রক্ত নিয়া পরীক্ষা করে তার প্ল্যাটিলেট নির্দিষ্ট মাত্রার নীচে চইলা গেলো কী না। চইলা গেলেই বেকসুর খালাস!

তো সেই পোলার হাঙ্গার স্ট্রাইকের এইটাই কারণ। আর কিছু দিন না খাইয়া থাকলেই নাকি ডাক্তার তারে খালাসের জন্য সার্টিফাই করবো। সে মুক্তি চায়! চার দেয়ালের দম বন্ধ করা মানসিক যন্ত্রণা থেইকা মুক্তি চায়! মুক্তির স্বাদ আস্বাদনের এই তরিকার কথা চিন্তা কইরা আমার গা শিউরিয়া উঠলো। আমি বিমর্ষ মুখে বিড়ি টানতে টানতে তার দিকে তাকায়া রইলাম।  

 আমার সেল-মেটদের দুইজন হইলো রুমানিয়ান, চুরির দায়ে ধরা খাইছে। একজন পেরুভিয়ান, একজন বুরকিনা ফাসো’র, একজন আলবেনিয়ান আর অন্যজন কসোভোর। শেষের চারজন ডাঙ্কি মাইরা ভিয়েনাতে ঢুইকা পোলিশের হাতে ধরা খাইয়া এই জেল হাজতে। আপনারা “ডাঙ্কি” শব্দের আসল মজেজা জানেন কী না, জানি না। তবে অবৈধ ভাবে নদী পার হইয়া বা পাহাড় ডিঙ্গায়া যারা ইউরোপে প্রবেশ করে-সেইটারে কয় “ডাঙ্গি মারা”। কী একটা অবস্থা!

​​আমার কয়েদ জীবনের একদিন দুই দিন তিন দিন কইরা কাটতে লাগলো। ইতিমধ্যে জেলখানায় আমার জমাকৃত আড়াই শ ইউরো থেইকা সপ্তাহের বরাদ্দ ৬০ ইউরো উঠায়া বিড়ি আর কিছু খাবার কিনলাম। পাঁচ বা ছয় দিনের মাথায় একদিন সকালে উইঠা খেয়াল করলাম আমার বালিশের তলায় গুজানো বিড়ির প্যাকেট আর Semmel (এক ধরনের ট্র্যাডিশানাল ভিয়েনিজ রুটি) উধাও। সেল-এর ছয় জনরে সবাইরে জিগাইলাম। তারা উলটা ঝাড়ি মাইরা কইলো, আমরা চোর নাকি! সেদিনই সিদ্ধান্ত নিলাম, এই সেল চেঞ্জ করার জন্য আবেদন করুম। চোর বাটবারদের সাথে থাকুম না- আবেদনে এই কারণ লিখবার পর আমার আবেদন মঞ্জুর হইলো। তারা কইলো, যেহেতু তুমি সাউথ এশিয়ান, তাই ইন্ডিয়ান কয়েদিদের একটা সেল আছে- সেখানে তোমারে স্থানান্তর করা হইবো কাল সকালে। মনে মনে কইলাম, ইন্ডিয়ান মাল না জানি কেমন হয়। মুখে কইলাম, তথাস্তু!

​​পরদিন সকালে ইন্ডিয়ানদের একটা সেল-এ আমারে পাঠানো হইলো।

 ৪.

পরদিন নতুন সেল-এ আইসা দেখি সাত জন ইন্ডিয়ান, আউট অফ এইট! মানে আমি সহ এই সেল ফুল হাউস। মজার ব্যাপার হইলো, এই সাতজনই শিখ ধর্মাবলম্বী। তারা আমারে দেশি ভাই পাইয়া (মানে বৃহত্তর ভারতবর্ষের লোক অর্থে) সাদরে গ্রহণ করলো। তার উপ্রে আমি বাংলাদেশী শুইনা তাদের কৌতুহলের শেষ নাই। আমার অস্ট্রীয়া জীবন আর ব্যক্তিজীবন নিয়া নানান প্রশ্ন। আমি বারো বচ্ছর ধইরা এই দেশে আছি, সেরের উপ্রে সোয়া সের হিসাবে আবার এখানকার Vienna University of Economics (Wirtschaftsuniversität Wien) -এর একটা স্নাতক ডিগ্রীও আছে- এগুলা শুইনা তারা কিছুতেই অঙ্ক মিলাইতে পারলো না যে কেন তাইলে আমি আজকে জেলে। আস্তে ধীরে এর জবাব দিমু বইলা আমি প্রথম ধাক্কাটা সামলাইলাম।

​​এই সাতজনের পাঁচজনই ডাঙ্কি পার্টি। আর এরা প্রত্যেকেই দুই/তিন বার এ্যাসাইলাম প্রার্থনা কইরা প্রত্যাখাত হইছে। তাই তারা এখন হাজতি। যেকোন দিন তাদের এই দেশ থেইকা ডিপোর্ট করা হইতে পারে- এই ভয় আর আতঙ্ক তাদের প্রতিদিনের সঙ্গী।

এই সাতজনের প্রত্যেকেই অল্প শিক্ষিত, না পারে জর্মন, না পারে ইংরাজীতে মোটামুটি কথা কইতে। অতএব, হিন্দী ভাষাটাই তাদের সাথে আমার কথাবার্তার একমাত্র মাধ্যম। আমি হিন্দী বুঝি, কিন্তু কইতে গেলে তোতলাইতে থাকি। “হিন্দী-উর্দু কমু না” টাইপ জাতীবাদী “প্রগতিশীল” মধ্যবিত্ত বাঙালীগো এইসব বায়নাক্কা আমার মধ্যে নাই। পৃথীবির প্রতিটা ভাষাই তার নিজের মত কইরা মধুর। আমার ভাঙ্গা হিন্দীতেই তাই তাদের সাথে বাতচিত চলতো। আর তারা আমারে “বন্ধু” বইলা ডাকা শুরু করলো।

​​তারা কেউ গ্রামের কৃষকের ছেলে, কেউ বা নিম্নমধ্যবিত্ত পরিবার থেইকা উইঠা আসা। জমিজমা বেইচা দালালের হাত ধইরা ডাঙ্কি মাইরা আইসা আজ তারা ইউরোপের জেলে। তারা তো ক্রিমিনাল নয়! একটা ফকিন্নি দেশের লোক হিসাবে একটু উন্নত জীবন-জীবিকার উদ্দেশ্যে জীবন বাজী রাইখা আজ তারা এইখানে।

​​কিছুদিনের মধ্যেই তাদের অজান্তে আমারে তারা এই সেল-এর নেতা হিসাবে ট্রিট করতে শুরু করলো। কী ভাবে? কারণ আমি “শিক্ষিত”, আমি জর্মন পড়তে-লিখতে-বলতে পারি, তাদের আইনী কাগজপত্র আমি ভাঙ্গা হিন্দীতে ইন্টারপ্রেইট কইরা দেই, তাদের কোনো দরকারে বা অসুখ বিসুখে আমি জেল কর্তৃপক্ষের সাথে দোভাষী হিসাবে সহায়তা করি। আর যেইটা করছি, তা হইলো সেল-এর মধ্যে আমি একটা ডিসিপ্লিন আইনা দেই। কে কোনদিন টয়লেট ক্লিন করবো, কে কোনদিন সেল-এর ফ্লোর মপ করবো- এই কাজগুলা আমরা রুটিনমাফিক ভাগ কইরা নেই।

​​সবচে ইন্টেরেস্টিং ব্যাপারটা হইলো, জেলের সেল-এ আমাদের যে জর্মন পত্রিকা (Die Kurier Zeitung) ফ্রি-তে সরবরাহ করা হইতো, আমার কাজ ছিলো এই সাত অভাগারে পত্রিকাটার “রাশিফল” কলামটা অনুবাদ কইরা শুনানো। তারা উদ্গ্রীব হইয়া প্রতিটা দিনের যার যার ভাগ্যের ফোরকাস্ট শুনতো আমারে ঘিরা গোল হইয়া বইসা। “আপনার আজকের দিনটি খারাপ যাবে” টাইপ ফোরকাস্টগুলা আমি এড়ায়া যাইতাম। ভালো ভালো কথা নিজের মনের মাধুরী মিশায়া মিথ্যা আশ্বাসে তাদের শুনাইতাম। স্পষ্ট দেখতে পাইতাম, মুক্তির আশায় তাদের চোখ তখন একবিন্দু আশার আলোয় চিকচিক কইরা উঠতো। আমার মন তখন আদ্র হইতো, আমার চোখ ভিইজা উঠতো।

​​তারা ছিলো বেশ ধার্মিক। প্রতিদিন দুইবার না জানি তিনবার কইরা মাথায় রুমাল বাইন্ধা লাইন কইরা দাঁড়াইয়া গুরু নানকের স্তোত্র পাঠ করতো। আমি তাকায়া তাকায়া দেখতাম আর জীবনে ভক্তিরসের গুরুত্ব আর মহীমা সেই প্রথম উপলব্ধি করতে পারলাম। আমি তখন ছিলাম Agnostic বা অজ্ঞেয়বাদী। তারা আমারে কখনও নামাজ-কালাম পড়তে দেখতো না।

 -“তুমি নামাজ পড় না?”

-“না”, ক্ষমাসুলভ হাসি দিয়া উত্তর দিতাম।

-“নামাজটা পইড়ো, বুঝছো? মনে শান্তি আর বল পাইবা।“

-“চেষ্টা করুম”, আমার আবার হাসি।

​​আমার আরেকটা ব্যাপারে তারা বেশ আশ্চর্য হইতো। আমার স্বল্প সময়ের জেল জীবনে আমি হাতে গোণা ২/৩ বার শুধু নীচের লন-এ ঘুরাঘুরি করতে বার হইছিলাম। বাকী দিনগুলার প্রায় চব্বিশ ঘণ্টাই আমার কাটতো লাইব্রেরী থেইকা আনানো Stefan Zweig, Elfriede Jelinek, Peter Drucker, Bohumil Hrabal, Heinrich Heine ইত্যাদি জর্মন ঔপন্যাসিক আর কবিদের বই পইড়া আর দরকার মতো গ্রোসারিতে গিয়া বিড়ি, টুকটাক খাবার কিনা আনার মধ্যে। একটা মানুষ হাগা-মুতা-খাওয়া বাদে কেমনে দিনের পর দিন বিছানায় শুইয়া বইসা বই পড়ে- এইটা নিয়া তাদের গবেষণার অন্ত ছিলো না।

এই প্রসঙ্গে একটা কথা উল্লেখ করার লোভ সামলাইতে পারতেছি না। ২০০১/২০০২ এর দিকে আমি প্রথম নারীবাদী লেখক Kate Millett -এর Sexual Politics বইটা পড়ি। ঘটনাচক্রে আমার কারাবাসের মধ্যে একদিন আমার এক বাঙালী ছোট ভাই (তার কথা আমি পরে বলুমনে) হুমায়ুন আজাদের “নারী” বইটা পৌঁছাইয়া দেয়। “নারী” বইটা পরার পর আশ্চর্য হইয়া বুঝতে পাড়লাম, বইটা Sexual Politics -এর হুবহু বঙ্গানুবাদ, মানে চৌর্যবৃত্তি আর কী! আজাদ শুধু “নারী’ বইটার দুয়েকটা অধ্যায় (যেমন, বেগম রোকেয়ারে নিয়া) নিজে লিখছেন মাত্র। আজাদপ্রেমীরা এই কথা শুইনা গোস্বা করলেও কইতে বাধ্য হইতেছি, সেদিন থেইকা এই ইসলামফোবিক বিশাল চোর পণ্ডিতের প্রতি শ্রদ্ধা আমার উইঠা গেছিলো।

সে যাই হোক, এদিকে আমি শুইয়া বইসা বই পইড়া আর রোজনামচা লিইখা আর তিন বেলা খাইয়া খাইয়া শুয়োরের মতো মোটা হইতেছি। ইন্ডিয়ান ভাইদের এন্টারটেইনমেন্ট বলতে দুপুর-সন্ধ্যা তাস পিটানো আর ব্যায়াম করা। ফ্রি হ্যান্ড ব্যায়াম ছাড়াও তারা আরেকটা অদ্ভুত ব্যায়াম করতো। বাঙ্কারের মাঝারি সাইজের ছোট একটা রড ক্যামনে জানি যোগাড় কইরা রডের দুই মাথায় পানি ভর্তি দুইটা প্লাস্টিকের বাকেট (টয়লেটে ছিলো) রডের দুই মাথায় দড়ি দিয়া কঁইষা বাইন্ধা কাধে আর হাতে নিয়া উঠবস করতো। এই টেকনিক দেইখা অভিভূত হইয়া আমিও বিসমিল্লাহ বইলা সেই ব্যায়াম উৎসাহের সাথে শুরু কইরা দিলাম।

এইভাবে দিন যায়। ইতিমধ্যে প্রি-পেইড কার্ড কিন্যা ফোন বুথ থেইকা চার-পাঁচজন জরুরী ব্যক্তিরে আমি ফোন দিলাম- আমার আব্বা-আম্মারে (চাপা মারলাম যে আমি ভিয়েনার বাইরে আছি), আমার অতি অতি ঘনিষ্ঠ এক বন্ধুরে (নাম Werner Aichhorn), আমার ঘনিষ্ঠ এক বাঙালি ছোট ভাই (ভিয়েনায় থাকতো), আমার আরেক বন্ধু বিশ্বজিৎ মুনশিরে (তখন তিনি লন্ডন থাকতেন), আর আমারে এই গজব থেইকা উদ্ধারকারী আমার Rechtsanwalt অর্থাৎ ল’ইয়াররে।

এরপর শুরু হইলো আমার আইনী লড়াই আর কারা কর্তৃপক্ষের সাথে কাইজা। সেইসব সংগ্রামের ঘটনা বাকী কিস্তিতে।

(চলবে)

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 

 ​​

সেলিম তাহের
সেলিম তাহের
জন্ম: ৩ সেপ্টেম্বর, ১৯৬৭, ঢাকা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও পরবর্তিতে ভিয়েনা ইউনিভার্সিটি অব ইকনোমিক্স থেকে স্নাকত্তোর লাভ করেন। দীর্ঘ প্রবাস জীবনের পর বর্তমানে ঢাকাতে স্থায়িভাবে বাস করছেন। শখের লেখক, নিজের আনন্দের জন্য লিখেন।  

লেখকের আরো লেখা

সর্বশেষ

নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
নারীর অধিকার কোন পণ্য নয়, প্রিয় ফ্লোরা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
রাবেয়া বশরীর একগুচ্ছ কবিতা
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
মেয়েটি আমার মাথায় চা ঢেলে দিতে লাগল
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
​একটা খেঁজুর গাছের শাহাদাত ও পয়লা বৈশাখ
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
কাউয়া বেশি, শিন্নি কম
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
দুপুর মিত্রের উপপাদ্য
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
কাল্পনিক নাটক : ব্যাংকু
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
​৭ই মার্চের ভাষণ ও তার প্রেক্ষাপট
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
কর্তৃপক্ষের প্রতি আনুগত্য: মিলগ্রামের পরীক্ষা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা
তাসনীম খলিলের ভারতপন্থা

জনপ্রিয়

মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
মঙ্গার বাইরেও গাইবান্ধার একটা পরিচয় আছে
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
তীব্র তাপে জ্বলছে নিজেই হাওয়া
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ভারতকে বন্ধুরাষ্ট্র মনে করার বাস্তবতা বাংলাদেশের নেই
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
ইডেনে ছাত্রলীগের যৌন রাজনীতি এবং একজন সুলতানা কামাল
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
মঙ্গল শোভাযাত্রা নিয়া প্রশ্ন ওঠা শুরু হইছে
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
ভালোর বাসায় পুঁজির ডিম
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
সানজিদা আমীর ইনিসীর কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
মজনু শাহ’র দুটি কবিতা
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
বাংলাদেশের বেশির ভাগ দুর্ভাগ্যের জন্য বামেরা দায়ী
নীতুর লিপস্টিক
নীতুর লিপস্টিক