ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ। তিনি মূলত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং এনজিও নিয়ে গবেষণা করেছেন। তাঁর একটি উল্লেখযোগ্য গবেষণা হলো ‘বাংলাদেশে রাজনৈতিক অংশগ্রহণ এবং এনজিও’, যা ‘জার্নাল অব দ্য এশিয়াটিক সোসাইটি অব বাংলাদেশ’-এ প্রকাশিত হয়েছে। সম্প্রতি আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিতর্ক নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়।
আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে একটা বিতর্ক চলছে। শেষ পর্যন্ত এ বিষয়ে সবাই একমত না হলে পরিস্থিতি কোন দিকে মোড় নিতে পারে?
আমার কাছে মনে হয়, এখনই নির্বাচন পদ্ধতি পরিবর্তন করা হলে জটিলতার সৃষ্টি হবে। আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির দিকে যাওয়াটা একটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। যেমন দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশের বড় রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে আধিপত্যবাদী চরিত্র আছে, সেটা কি এক নিমেষে ধ্বংস করা সম্ভব হবে? আমরা যতই বলি না কেন, সেটা শিগগির শেষ করা সম্ভব নয়। আর এটা পারা সম্ভবও নয়। সে জন্য বলছি, বিএনপির মতো বড় দল কেন আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি মেনে নেবে? কারণ, আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে গেলে তাদের যে আধিপত্য এবং তারা যেভাবে সরকার পরিচালনা করতে চায়, এটা হলে তারা সেটা করতে পারবে না। তারা সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত বাধার সম্মুখীন হবে। আর আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে অনেক দলই ভোটের শতাংশে সংসদে আসার সুযোগ পাবে। এতে অনেক দল বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে চাইবে। বর্তমান পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে শুধু একটি সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিরোধী দল হবে। আর আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে ১০টি দল বিরোধী দল হবে। এতগুলো দলকে মোকাবিলা করা সরকারি দলের কাছে বেশ চ্যালেঞ্জিং বিষয় হবে।
আমি যেটা বুঝি, বড় দল হিসেবে কোনো দলের যে জায়গায় আধিপত্য খর্ব হবে, সেখানে তারা কোনো ধরনের ছাড় দেবে না। সেই কারণে আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য হওয়ার কোনো সম্ভাবনা দেখি না।
এখন যদি আনুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে সব দল ঐকমত্যে না পৌঁছায়, সে ক্ষেত্রে কী করণীয়?
নির্বাচন পদ্ধতি নিয়ে ঐকমত্য না হলে পরিস্থিতি জটিল হওয়ার কোনো ধরনের সম্ভাবনা দেখি না। এ বিষয়টা সব দলের বুঝতে হবে, নতুবা সমাধানে আসা যাবে না। আর কোনো দল কি এটা নিয়ে বাধ্য করতে পারে? বিএনপির বিরুদ্ধে অন্য দলগুলো এ বিষয়ে কী বলছে, সেটা বিএনপির জন্য ম্যাটার করে না। কারণ, বিএনপি হলো বড় দল। আবার বিএনপি যদি এটা না চায়, তাহলে ঐকমত্য কমিশনের পক্ষে সেটা করা অসম্ভব। কারণ, সংখ্যাগরিষ্ঠের মতামত উপেক্ষা করা সম্ভব নয়।
নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে না হলে পরিস্থিতি কী দাঁড়াতে পারে?
ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন না হলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি খারাপের দিকে যেতে পারে। যারা ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চায়, তারা কিন্তু শক্তিশালী অবস্থানে আছে। শুধু তো বিএনপি এ সময়ে নির্বাচন চাইছে না, অনেক দলই তো ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন চাইছে। এমনকি সেনাবাহিনীও এ সময়ের মধ্যে নির্বাচন চায়। তবে জাতীয় নির্বাচন যদি কোনো কারণে পিছিয়ে যায়, তাহলে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি যে আস্থার জায়গা, সেটা আরও দুর্বল হয়ে যাবে। সে কারণে দেশের মধ্যে রাজনৈতিক নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তারপর যদি নির্বাচন এপ্রিল বা জুনে নেওয়া হয়, তাহলে সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়টা প্রশ্নবিদ্ধ হবে। সে সময় এসএসসি পরীক্ষা হয়। জলবায়ুগতভাবে সে সময় তীব্র গরম থাকে। এরপর আওয়ামী লীগ নির্বাচন করতে পারবে কি না, এটাও একটা বড় প্রশ্ন? তাই ফেব্রুয়ারিতে যদি নির্বাচন না হয়, তাহলে নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা খুব কম।
নির্বাচনীব্যবস্থায় কোন কোন ক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন?
একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য তেমন কিছু লাগে না, শুধু সদিচ্ছা থাকলেই সেটা সম্ভব। তবে কিছু আইনকানুনের তো সংস্কার লাগবে। যেমন নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দায়িত্বে কারা থাকবে, সেটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে শুধু পুলিশ না বিডিআর না সেনাবাহিনী থাকবে, সেটার জন্য ক্লিয়ার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আগে নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনীর বিষয়টা অন্তর্ভুক্ত ছিল। ২০১৪ সালে আওয়ামী লীগ সরকার সেটা বাতিল করে দেয়। এখন কিন্তু সেনাবাহিনীর দায়িত্ব যুক্ত করতে হবে। নতুবা নির্বাচনকালীন ভায়োলেন্স নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না।