২০২৫ সালের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন হাঙ্গেরিয়ান লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই।
বৃহস্পতিবার সুইডেনের স্থানীয় সময় দুপুর ১টায় রয়্যাল সুইডিশ একাডেমি অব সায়েন্সেস তার নাম ঘোষণা করে।
সুইডিশ অ্যাকাডেমি বলেছে, ‘লাসলো মধ্য ইউরোপের একজন দারুণ লেখক। তার মনোমুগ্ধকর এবং দূরদর্শী লেখা বৈশ্বিক ভয়াবহতার মাঝেও শিল্পের শক্তিকেই প্রতিফলিত করে।’
প্রসঙ্গত, ১৮৯৫ সালে সুইডিশ উদ্ভাবক এবং সমাজসেবী আলফ্রেড নোবেলের উইলের মাধ্যমে নোবেল পুরস্কার প্রতিষ্ঠিত হয়। সুইডিশ শিল্পপতি আলফ্রেড নোবেল ডিনামাইটের উদ্ভাবক। তার মৃত্যুর পাঁচ বছর পর ১৯০১ সাল থেকে বিশ্বের সবচেয়ে দামি ও সম্মানজনক এ পুরস্কার দেওয়া হচ্ছে।
১৯০১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ১১৭ বার সাহিত্যে নোবেল দেওয়া হয়েছে। গত বছরের পুরষ্কারটি দক্ষিণ কোরিয়ার লেখক হান কাং তার কাজের জন্য জিতেছিলেন।
লেখক লাসজলো ক্রাসনাহোরকাই সম্পর্কে যা জানা যায়,
হাঙ্গেরির সাহিত্যে অসীম জনপ্রিয়তা ও প্রভাব তাঁর; বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের দাপটেও শিল্পের শক্তি চেনায় তাঁর কলম।
আধুনিক হাঙ্গেরীয় সাহিত্যের একজন অন্যতম প্রধান ব্যক্তিত্ব লাসজলো। অভিনব শৈলীর পাশাপাশি দার্শনিক গভীরতার জন্য তাঁর সাহিত্য সমাদৃত হয়েছে। তাকে ফ্রান্জ কাফকা এবং স্যামুয়েল বেকেটের ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী হিসেবে বিবেচনা করা হয়। বিশ্বজোড়া আতঙ্ক ও সন্ত্রাসের মধ্যেও শিল্পের লেলিহান ঔজ্জ্বল্য ফুটে ওঠে লাসলোর লেখায়। তাই যুদ্ধবিধ্বস্ত সময়ের বুকে ফুলের মতো স্থান করে নিল তাঁর সাহিত্য।
লাসজলোর জন্য এই সাহিত্যে প্রথম পুরস্কার নয়। ২০১৪ সালে সাহিত্যকর্মের জন্য ম্যান বুকার ইন্টারন্যাশনাল পুরস্কার পান তিনি। এই পুরস্কার বিশ্বসাহিত্যে তাঁর অবস্থানকে সুদৃঢ় করে।
লাসজলোর সাহিত্যের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল স্বতন্ত্র শৈলী ও গঠন। উপন্যাসের মূল বিষয়বস্তু হলো— মানবতার অবক্ষয়, ধ্বংসের অনিবার্যতা এবং আধুনিক জীবনের লক্ষ্যহীন চলন। তাঁর চরিত্রদের মধ্যে প্রায়ই এক ধরণের হতাশা ও বিচ্ছিন্নতা দেখা যায়; তাঁরা এমন এক জগতের পথিক, যেখানে নৈতিকতা ও আশা বিলীনপ্রায়।
১৯৮৫ সালে প্রকাশিত ‘স্যাটানটাঙ্গো’ নামে প্রথম উপন্যাস লিখেই খ্যাতি পান লাসলো। এই উপন্যাসে বিচ্ছিন্ন, পতিত এক কৃষি সমবায় গ্রামের জীবন তুলে ধরেছেন তিনি। সেখানে ধরণের বিভ্রম ও আশার জন্ম দেয় এক রহস্যময় আগন্তুকের আগমন। এই উপন্যাস অবলম্বনেই এই শিরোনামেই সাত ঘণ্টার কালজয়ী চলচ্চিত্র নির্মাণ করেন বিখ্যাত পরিচালক বেলা টর।
লাসজলোর আরেকটি ফিকশন উপন্যাস হলো— ‘দ্য মেলানকোলি অব রেজিসট্যান্স’। হাঙ্গেরির এক কাল্পনিক শহরের জীবন ফুটে ওঠেছে এই উপন্যাসে। সামৃদ্রিক প্রাণী হাঙরের প্রদর্শনীকে কেন্দ্র করে মানুষের মধ্যেকার উন্মাদনা, সামাজিক বিশৃঙ্খলা ও একনায়কতন্ত্রের উত্থানের চিত্র আঁকা হয়েছে তাতে।
‘ওয়ার অ্যান্ড ওয়ার’ লাসলোর আরেকটি বিখ্যাত উপন্যাস। লম্বা লম্বা বাক্যে লেখা এই উপন্যাস লাসজলোর শৈলী নিয়ে পাঠকদের নতুন করে ভাবায়। উপন্যাসের নায়ক একটি পাণ্ডুলিপি রক্ষা করার জন্য বিশ্বের বিভিন্ন শহর ঘুরে বেড়ায়। বিশ্বের চূড়ান্ত ধ্বংসের একটি কাব্যিক বর্ণনা পাওয়া যায় এই উপন্যাসে।
এবার লাসজলোকে পুরস্কারের জন্য মনোনীত করার নেপথ্যে নোবেল কমিটির বড় কারণ ছিল তাঁর সাহিত্যে শিল্পের জয়ধ্বনি তোলার প্রচেষ্টা। যখন সারা বিশ্বের বেশ কিছু দেশ যুদ্ধবিধ্বস্ত বা যুদ্ধের জন্য উৎসুক, তখন বারবার শিল্পের মোহিনী প্রেম ও বন্ধনের কথা মনে করিয়ে দিতে চায় লাসজলোর সাহিত্য।