প্রকৃতির প্রতি সদয় আচরণ না করলে মাছও হারিয়ে যাবে বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছেন, ‘প্রকৃতি আমাদের প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে। আমরা শুধু ধরে আনছি, পরিবেশন করছি। তার প্রতি সদয় হওয়ার চিন্তা আমাদের মাথায় আসে না। আমরা মাছের কথা বলি। কিন্তু আমাদের প্রকৃতির ওপর সদয় হওয়ার কথা চিন্তা করতে হবে।’
সোমবার রাজধানীর বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সম্মেলন কেন্দ্রে মৎস্য সপ্তাহ-২০২৫ উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এত নির্দয় হচ্ছি যে অন্যান্য জিনিসের সঙ্গে মাছও বোধ হয় আমাদের কপাল থেকে ছুটে যাবে। দুনিয়ার বর্জ্য সব পানির মধ্যে, যা কিছু আছে তা পানির দিকে দিয়ে দিচ্ছি।’
মাছ আমাদের জন্য প্রকৃতির উপহার উল্লেখ করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘এটা কোনো কারখানাতে বানাই নাই। বানানোর জন্য শ্রমিক নিয়োগ করি নাই। এটা আল্লাহর দান, আমরা ধরে নিয়ে আসি। খাবার বেলায় উৎসাহ পাই। আরও খেতে চাই।’
ড. ইউনূস বলেন, ‘নদী শাসনের কথা বলি, কথার কথা বলি হয়তো। নদী পালনের কথা বলি না। শাসন করতে চাই আমরা। শাসনের নামে তার প্রতি যত নির্দয় হওয়ার দরকার তা হই। আমরা বর্জ্য তো পানির মধ্যে দিচ্ছি। কিন্তু সেটা যে বিষ হয়ে আমাদের প্রতি আসছে, তা-ও গ্রাহ্য করেছি না। বর্জ্য ছাড়াও শরীরের যত অনিষ্টকারী জিনিস আছে, সব পানির মধ্যে ঢালছি। সে পানি আগামী দিন থাকবে কি, থাকবে না সেটারও পরোয়া করছি না। মনে হয় এটা আল্লাহর কর্তব্য, আমাদের খাওয়াতেই হবে তার। আমি যত অত্যাচার করি না কেন।’
পানির কথা ভুলে না যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘মাছ তত দিন পাব, যত দিন আমরা পানি রাখতে পারব। বাংলাদেশের প্রতি প্রকৃতি অত্যন্ত সদয়। প্রচুর পরিমাণ পানি আমাদের দিয়েছে।’
বাংলাদেশের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য ও জলসম্পদ মৎস্য উৎপাদনের বিপুল সুযোগ তৈরি করেছে উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, বর্তমানে দেশে প্রায় ১২ লাখ নারীসহ লাখ লাখ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এ খাতের সঙ্গে যুক্ত। কিন্তু প্রকৃত মৎস্যজীবীরা অনেক সময় প্রতিকূলতার মুখোমুখি হন।
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা শুধু মাছের দাম বা মাছটা টাটকা কি না, সেটা দেখি, কিন্তু যারা প্রতিদিন শ্রম দিয়ে মাছ আমাদের কাছে পৌঁছে দেন, তাদের কথা ভুলে যাই। আজকের দিনটা অন্তত তাদের কথা মনে করার দিন।’