ভূমিপুত্র ডেস্ক:
'সার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ' নামে সম্প্রচারিত একটি টেলিভিশন শোকে কেন্দ্র করে উঠেছে চাঞ্চল্যকর অভিযোগ—স্টার্টআপ বিনিয়োগের নামে একাধিক উদ্যোক্তার সঙ্গে প্রতারণা করেছেন একটি প্রভাবশালী মহল। অভিযুক্তদের মধ্যে রয়েছেন তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ও প্রধানমন্ত্রীর তথ্যপ্রযুক্তি উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়ের ঘনিষ্ঠ তিন সহযোগী—ফাহিম মাসরুর, সামি আহমেদ, এবং সামিরা খান।
অভিযোগ অনুসারে, 'সার্ক ট্যাঙ্ক বাংলাদেশ' শো-তে অংশ নেওয়া শত শত উদ্যোক্তাকে 'স্টার্টআপ বাংলাদেশ' প্রকল্প থেকে বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে নেওয়া হয়েছে ৫০ হাজার থেকে কয়েক লাখ টাকা পর্যন্ত। ফি নেওয়ার পর দীর্ঘ সময় পেরিয়ে গেলেও অধিকাংশ উদ্যোক্তা কোনো বিনিয়োগ পাননি। ফোন করলে উত্তরও মেলে না।
একজন ভুক্তভোগী উদ্যোক্তা বলেন,
“আমরা বিনিয়োগ পাওয়ার আশায় টাকা দিয়েছি। কিন্তু এখন কেউ যোগাযোগ করছে না। এটা কোনো ইনভেস্টমেন্ট না, বরং একপ্রকার কৌশলগত প্রতারণা।”
আরেকজন জানান,
“আমাদের বলা হয়েছিল সরকারি ফান্ডিং আসবে। পরে দেখি টাকার উৎস ছিল ব্যক্তিগত, অথচ আমরা দিয়েছিলাম সরকারি ইনভেস্টমেন্ট পাওয়ার আশায়।”
অভিযোগ রয়েছে, যে ক'জন উদ্যোক্তা ফান্ড পেয়েছেন, তারা বেশিরভাগই অভিযুক্তদের আত্মীয়স্বজন বা ঘনিষ্ঠজন। তদন্তে উঠে এসেছে, সামিরা খানের ভাইয়ের মালিকানাধীন মাত্র ৩ মাস বয়সী একটি কোম্পানিকে দেওয়া হয়েছে প্রায় ২ কোটি টাকার ফান্ড। আবার একটি ফিনটেক প্রতিষ্ঠান, যেটি কোনো আনুষ্ঠানিক আবেদন করেনি, সেটিও বিনিয়োগ পেয়েছে—ফাহিম মাসরুরের ঘনিষ্ঠতার সুবাদে।
অর্থনীতিবিদ ড. আনিসুর রহমান বলেন,
“সরকারি তহবিল অপব্যবহার করা শুধু দুর্নীতি নয়, রাষ্ট্রীয় সম্পদের ভয়াবহ অপচয়। এ বিষয়ে নিরপেক্ষ তদন্ত অপরিহার্য।”
অর্থনীতি বিশ্লেষক ড. তানভীর হাসান বলেন,
“স্টার্টআপ ফান্ডিং ব্যবস্থাকে ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে যদি উদ্যোক্তাদের কাছ থেকে টাকা নেওয়া হয়, তাহলে তা একটি স্পষ্ট আর্থিক অপরাধ।”
সাইবার আইন বিশেষজ্ঞ ব্যারিস্টার শাওন সিদ্দিক বলেন,
“এটি একটি প্রতারণা নয়, বরং রাষ্ট্রীয় আস্থার ওপর আঘাত। এমন ঘটনা দেশের স্টার্টআপ ইমেজ নষ্ট করে।”
ফাহিম মাসরুর দেশের সফটওয়্যার খাতের সংগঠন বেসিসের সাবেক সভাপতি এবং পলকের ঘনিষ্ঠ হিসেবে পরিচিত। সামি আহমেদ আছেন সরকারি প্রতিষ্ঠান 'স্টার্টআপ বাংলাদেশ লিমিটেড'-এর নেতৃত্বে, যার অধীনে রয়েছে শত কোটি টাকার তহবিল। সামিরা খান মিডিয়ায় স্টার্টআপ প্রশিক্ষণ ও ইভেন্টের সঙ্গে যুক্ত।
একাধিক ভুক্তভোগী ইতিমধ্যেই দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং আইসিটি মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। তাদের দাবি—এই সিন্ডিকেটকে বিচারের আওতায় আনা হোক এবং প্রকৃত উদ্যোক্তারা যেন ন্যায্য সুযোগ পান।
এ বিষয়ে স্টার্টআপ বাংলাদেশ বা আইসিটি বিভাগ এখনও আনুষ্ঠানিক কোনো বক্তব্য দেয়নি। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে শুরু হয়েছে জোরালো বিতর্ক।
বাংলাদেশের স্টার্টআপ ইকোসিস্টেম যখন আত্মপ্রকাশের পর্যায়ে, তখন এমন একটি কেলেঙ্কারি শুধু অর্থনৈতিক নয়, বরং নীতিগত দুর্নীতির জ্বলন্ত উদাহরণ। এর মাধ্যমে দেশি ও আন্তর্জাতিক বিনিয়োগকারীদের আস্থা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে পড়েছে।
স্টার্টআপ উন্নয়নের মূল ভিত্তি হওয়া উচিত স্বচ্ছতা, জবাবদিহি এবং বিশ্বাসযোগ্যতা। এই ঘটনায় প্রমাণ হয়েছে, শুধু প্রযুক্তি প্ল্যাটফর্ম নয়—নৈতিক কাঠামোই বাংলাদেশের স্টার্টআপ ভবিষ্যতের জন্য সবচেয়ে জরুরি।